টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের শোলাকুড়া গ্রামের কৃষক আমির উদ্দিনের লটকন বাগান ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় গাছে গাছে এখন লটকনের সমারোহ। লটকন বাগানে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা পাকা লটকন। গ্রামের আঁকাবাকা পথ পাড়ি দিয়ে এই বাগানের দেখা মেলে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে আবডাল পর্যন্ত থোঁকায় থোঁকায় লটকন ধরে আছে। বাগান নিয়ে খুব খুশী আমির উদ্দিন। টানা পাঁচ বছর ধরে এই বাগান থেকে অর্থ আয় করছেন তিনি। তাঁর বাগান দেখে লটকন বাগান করতে আগ্রহী হয়ে পরছেন অনেকেই।

বাংলাদেশের নরসিংদী এলাকার লটকন দেশে সমাধৃত একটি মুখরোচক ফল। তবে বর্তমানে টাঙ্গাইলের পাহাড়ী অঞ্চলে এর চাষ লক্ষ করা যাচ্ছে। ইংরেজিতে বার্মিজ গ্রেপ নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এ ফলটি বুবি, বুগি, লটকা, লটকো, নটকো ইত্যাদি নামে পরিচিত। মার্চ মাসের দিকে লটকনগাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন বাজারে পাওয়া যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলের পাহাড়ি মাটি লটকন ফল চাষের জন্য খুব উপযোগী। ছোট ছোট অনেক কৃষক লটকন চাষে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। এতে শুধু ব্যবসায়ী বিষয় জড়িত নয়। বিশেজ্ঞ ডাক্তারদের মতে ফলটির অনেক পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণ রয়েছে। ভিটামিন-সি তে ভরপুর উপকারী এ ফলটি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।
পুষ্টিমূল্য : ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি, যা কাঁঠালের প্রায় দ্বিগুণ, আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন- বি ১-১০. ০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ২-০.।

সরেজমিনে গিয়ে সাগরদিঘী ইউনিয়নের শোলাকুড়া গ্রামের কৃষক আমির উদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, তার বাড়ির পাশে পতিত জমিতে অল্প কিছু লটকনের গাছ লাগিয়ে ছিলেন। মূলত শখ করেই দশটি লটকন গাছ দিয়ে ছোট পরিসরে বাগান করেছিলেন তিনি। বাজারে লটকনের চাহিদা এবং দাম ভালো থাকায় অর্থনৈতিকভাবে সফলতা পাচ্ছেন আমিল উদ্দিন।

তিনি আরও জানান, এ বছর ১ লাখ টাকার উপরে লটকন বিক্রি করতে পারবো। এতে আমার কোনো খরচ নেই। পাইকার বাগানে এসে লটকন কিনে নিয়ে যায়। বিক্রির কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। এখন আমার বাড়ির লোকজনসহ এলাকার অনেকেই লটকন বাগানে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

১০-১৫ বছর আগেও লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না। দামও ছিল কম। সেজন্য কেউ লটকনের আলাদা বাগান করার চিন্তা করত না। বর্তমানে টক-মিষ্টি সুস্বাধু এ ফলের চাহিদা ও মূল্য দুটিই বেড়েছে। এমনকি অন্যান্য ফল চাষের তুলনায় লটকনের ফলন বেশি হয় বলে চাষিরাও লাভবান হচ্ছে। গুণগত মান ভেদে লটকন মণপ্রতি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা
দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়ে থাকে। পাইকাররা নিজেরাই বাগান থেকে লটকন ক্রয় করে থাকেন। এ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় উঁচু লালচে অম্লীয় মাটি এবং ছায়ামুক্ত আবহাওয়া থাকায় লটকনের ফলন ভাল হয়ে থাকে।

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিসার দিলশাদ জাহান বলেন, ‘লটকন উৎপাদনে ঘাটাইলের মাটি খুবই উপযোগী। লটকন চাষে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। উপজেলায় লটকনের আবাদ আরো বাড়ানোসহ স্বাস্থ্যসম্মত ফল উৎপাদনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’

বার্তাবাজার/এম আই