কৃষকদের কৃষিকাজে সুবিধার্থে তিনদিন আগের ও পরের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, আলোকঘণ্টা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের জন্য কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১০ টিতেই স্থাপন করা হয়েছে কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড।
কিন্তু অবহেলা আর অযত্নে দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে বোর্ড গুলো। কোথাও আবার চুরি হয়ে গেছে রেইন গেইজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল। কয়েকটিতে এখন শোভা পাচ্ছে পাখির বাসা।
কৃষকরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের আবহাওয়া বোর্ডের চাকা কোনোদিনও ঘরেনি। সেখান থেকে কোনো সঠিক তথ্য পাননি তারা। প্রতিবছরই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও বোর্ডটি কোনো কাজেই আসছেনা তাদের। সংস্কারের দাবি জানান তারা।
আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা সব সময় মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন। বোর্ডটি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নির্মাণ হওয়ায় সময় মতো চাকা ঘুরিয়ে তথ্য হালনাগাদ করতে পারেনা তারা। আধুনিক কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড নির্মাণের দাবি জানান তারা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নয়ন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে ফসলের রক্ষা ও সঠিক সময়ে চাষাবাদের জন্য আগাম তথ্য দিতেতে ২০১৮ -২০১৯ অর্থবছরে এ প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে পদ্ধতিটি ম্যানুয়াল হওয়ায় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তা কেউই সুফল পাননি।
বৃহস্পতিবার সকালে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, পরিষদ ভবনের দেওয়ালে কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ডটি টাঙানো রয়েছে। বোর্ডের ওপরের একপাশে পোষ্টার লাগানো। আর আরেকপাশে টিনের টেবিলের ওপর টেলিভিশন রাখা রয়েছে। বোর্ডের তথ্য হালনাগাদ করা নেই, বোর্ডের নিচের দিকে ডানপাশে কৃষি কর্মকর্তাদের ফোন নাম্বার থাকার কথা থাকলেও তা নেই।
এসময় কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, পরিষদের আবহাওয়া তথ্যবোর্ডটি অকেজো। সেখান থেকে কোনোদিনই তিনি কোনো তথ্য পাননি। এটি চালু থাকলে কৃষকরা উপকৃত হতেন। পরিষদের সচিব মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, তিন – চার বছর আগে থেকেই বোর্ডটি চলেনা। কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে তাঁদের তেমন কোনো মিটিংও হয়না। তিনি বিষয়টি উপজেলা মিটিংয়ে উপস্থাপন করবেন।
সম্প্রতি চাপড়া, নন্দনালপুর ও জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেওয়ালে টাঙানো আবহাওয়া তথ্য বোর্ড গুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেখানে বাসা বেঁধেছে পাখিরা। দীর্ঘদিন হালনাগাদ নেই তথ্যের।
চাপড়া ইউনিয়নের ভাড়রা গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ঝড় – বৃষ্টিতে প্রতিবছরই তাঁদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু তাঁরা পরিষদ থেকে আগাম কোনো তথ্য পাননা। তিনি টেলিভিশন দেখে দেখে আবহাওয়ার তথ্য পেয়ে থাকেন।
ওই পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক মনজু বলেন, তাঁর কার্যালয়ের আবহাওয়া তথ্যবোর্ডের তথ্য কোনোদিনই কৃষি কর্মকর্তারা হালনাগাদ করেনা। নিয়মিত ব্যবহার না হওয়ায় সেখানে এখন পাখিরা বাসা বেঁধেছে। যন্ত্রপাতি গুলোও চুরি হয়ে গেছে। তিনি আধুনিক তথ্য সেবা বোর্ড চালুর দাবি জানান।
নন্দনালপুর ইউনিয়নের উপ – সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি সব সময় মাঠেই পড়ে থাকেন। এছাড়াও স্থাপনের পর থেকেই ডিসপ্লেতে সমস্যা। রেইন গেইজ মিটারের সৌরবিদ্যুত প্যানেলও হারিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় বাসা বেঁধেছে পাখিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, কৃষকদের আগাম আবহাওয়া তথ্য প্রদানের জন্য ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ টি ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু নানাবিধ কারণে ১০ টিই অকেজো হয়ে আছে। কয়েকটি ইউনিয়নের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন তিনি।
তাঁর ভাষ্য, তথ্যবোর্ড গুলো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নির্মাণ হওয়ায় তেমন সুফল পাওয়া যায়না। আধুনিক পদ্ধতিতে বোর্ড গুলো নির্মাণ করা হলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা উপকৃত হতেন। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল বলেন, কৃষি ও কৃষকদের স্বার্খে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বার্তাবাজার/এম আই