শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার গ্রামে স্মরণাতীত কাল থেকে চলে আসা ৭ দিন ব্যাপি বৈশাখী মেলা চলছে ।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও দিগম্বরী মাতার মন্দির কমিটির ব্যবস্থাপনায় পহেলা বৈশাখ থেকে ৭ দিন ব্যাপি এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে মেলার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় মেলা কমিটি।

আবহমান বাংলায়, ঐতিহ্যবাহী মাতার মন্দিরের মাঠে, বিশালাকার বটবৃক্ষের ছায়াতলে, শান্ত দীঘির পাড়ে প্রতি বছর প্রায় ১২শ’ বছর ধরে উৎসবমুখর পরিবেশে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ।

গত ১৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার শুভ সুচনা করেন, মন্দির কমিটির সভাপতি ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানিক ব্যানার্জির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার তোফাজ্জল হোসেন মোড়ল, মহিষার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি মোঃ অরুন হাওলাদার, মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধকালিন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান রাড়ী সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

মেলার প্রথমদিন থেকে হিন্দু পঞ্জিকা মেনে পূজার্চনা ও মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিখ্যাত এই মন্দির প্রাঙ্গনে পূজা দিতে আসে ধর্মভীরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তবৃন্দরা। শনি ও মঙ্গলবার দেয়া হয় পাঠা বলি। এ ছারাও সপ্তাহের মঙ্গলবারে মহাউৎসবে পূজিত হয় মাতাঠাকুরানীর মনসা মন্দির। মন্দির প্রাঙ্গনের পাশের সুবিশাল দীঘিতে দুধ ঢেলে পূজা করেন ভক্তবৃন্দ। তাদের বিশ্বাস এতে তাদের রোগবালাই মুক্ত ও জাগতিক মঙ্গল সাধিত হয়। মন্দির প্রাঙ্গনে সাতদিন ব্যাপী এ মেলায় বসে নানান রকমের দোকান, মাটির খেলনা, হরেক রকম মণিহারী পণ্য, বাঁশের তৈরি লোকজ শিল্পের বিভিন্ন পণ্য, গ্রামীন জীবনে গায়ের বধুদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। মেলা শুরু হয় সকাল ৭ টায় শেষ হয় সন্ধ্যার পরপরই।

স্থানীয় সাংবাদিক এম.হারুন অর রশীদ বলেন, এ মেলা শরীয়তপুর জেলার ঐতিহ্য ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রাণের উৎসব। ঢাকা ও বিক্রমপুরের ইতিহাস থেকে জানা গেছে প্রায় ১২শ’ বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা ছোটবেলা থেকে দেখি আসছি এখানে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ মেলার নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানিক ব্যানার্জি বলেন, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আবাল, বৃদ্ধ বনিতা, সকলের অংশগ্রহণে এ মেলা যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। মহিষার ইউনিয়নের শ্রী শ্রী দিগম্বরী মাতাঠাকুরানী মন্দির প্রাঙ্গনে শত শত বছর যাবৎ ব্যাপক উৎসব ও উদ্দীপনায় বসে বৈশাখী মেলা। এখানে সাতদিনই হিন্দু ধর্মাবল্বীদের পূজা উদযাপন হয় সুবিশাল শত শত বর্ষী বট ও বৃক্ষের ছায়া তলে।

ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মিন্টু মন্ডল জানান, মেলার শুরু থেকে ৬ জন পুলিশ সদস্য সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আইনশৃঙ্খলার সার্বিক উন্নয়নে জন্য নিয়োজিত আছে। এছারা পুরো মেলা প্রাঙ্গন সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। যে কোনোও ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ কাজ করছে।