রংপুরের মিঠাপুকুরে অর্ধ শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। নির্দিষ্ট আইন থাকলেও তা লঙ্ঘন করে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে কৃষিজমিতে এবং আবাসিক এলাকায় ৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ টি ইটভাটা গড়ে তোলা সহ নতুন একটি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একেকটি ভাটায় মৌসুমে ১৫ লক্ষ্য ইটের চাহিদা রয়েছে। এগুলোর জন্য মাটি প্রয়োজন। আর তাই আইন লঙ্ঘন করে এসব ইটভাটায় মির্জাপুর ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তী ইমাদপুর ইউনিয়নের ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। প্রতিদিন গড়ে ৩০ টি ট্রাক্টর দিকবিদিক থেকে মাটি বহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। মাটি বহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলাচলে সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। কয়লার বদলে ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত সহ হচ্ছে ফসলের ক্ষতি।
রাস্তা রক্ষায় সরকার আইন করলেও প্রশাসন সেই আইনের বাস্তবায়নে তেমন একটা আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই দুই ইউনিয়ন শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত জমিগুলো ভবিষ্যতে পতিত জমিতে পরিণত হবে। কৃষিজমি বিনষ্ট করে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে চালু রয়েছে, এ বিষয়ে বিশিষ্টজনরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
বুধবার(১৩ মার্চ) সরেজমিনে পুটিমারি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এএমএস ব্রিকস নামে ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার আশপাশের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে এনে ভাটার বিভিন্ন জায়গায় স্তূপ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ভাটার ইট পরিবহনের কারণে রাস্তা বন্ধসহ কোটি টাকার একটি ব্রীজ একাই ব্যাবহার করছেন।
কানারমাল্লি এলাকার রাস্তার পাশেই একটি পুকুর থেকে নিজস্ব ভেকু দিয়ে ৮ টি ট্রক্টর যোগে অনবরত মাটি পরিবহন করছেন ভাটার মালিক মামুনুর রশীদ। ভাটার পাশেই পাকা রাস্তা থাকলেও ইটভাটার কারণে সেগুলোর নাজুক অবস্থা। উঠে যাচ্ছে কারপেটিং আর সৃষ্টি হচ্ছে বড় খানাখন্দ।
ইটভাটার কাছে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তা দখলে নিয়ে তিনটি স্তূপ করে পাহাড় সমূতুল্য রাখা হয়েছে ইট তৈরির মাটি। ফলে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে নূরপুর ও পুটিমারি এলাকার লোকজনের।
হয়বতপুর গ্রামের যুবক রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে ইটভাটা চালু হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে তারা গ্রামের রাস্তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে চলাচল করতে পারছেন না। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাটি ধুলোয় ভরে যায়। আর বর্ষাকালে জমে যায় কাঁদা। এতে পরিবেশ চরম আকারে নষ্ট হচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফলে জবাবদিহিতা নেই ভাটা মালিকদের।
এছাড়াও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এভাবেই ইটভাটাগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে এবং ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরি করা হচ্ছে।
এএমএস ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মামুনুর রশীদ বলেন, ইট তৈরী করতে প্রচুর মাটি প্রয়োজন হয় সুতরাং মাটি বহন করতেই হবে।
উল্লেখ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন–২০১৩ আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি করা যাবে না। ওই আইনের ৬ নম্বরে ধারায় বলা হয়েছে, জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো যাবে না। এ ছাড়া এই আইনের ৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেডে ইটের ভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ ছাড়া সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে এবং বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপনে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, ইটভাটার কারণে গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে এছাড়াও “ইটভাটাগুলো গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহারের নিয়ম মানছে না। অভারলোডে ট্রাক্টর চালানোর কারণে অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।