দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন বালু খেকো একটি চক্র। করতোয়া নদীর চর কেটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দুরে চর কেটে বিলীন করার উৎসব চললেও, তা দেখেও না দেখার ভান উপজেলা প্রশাসনের। অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র ও ইচ্ছামতো বালু উত্তোলনের ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীর ধারঘেঁষে থাকা গ্রামগুলো নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ছে।

 

শুধু একটি চর নয়, ঘোড়াঘাট উপজেলার উপর দিয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে বালু উত্তোলন করেন বালু খেঁকো একটি চক্র। ভরা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে, আবার শুকনো নদীর চর কেটে চলে বালু উত্তোলনের এই মহোৎসব। বালু উত্তোলনের এসব পয়েন্টে উচু পাহাড় বানিয়ে রাখা হয় উত্তোলন করা বালু। তবে বালু খেঁকো চক্রের প্রভাবে জিম্মিদশায় স্থানীয় প্রশাসন।

 

ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার শালিকাদহ, নূনদহ, লালমাটি, ল্যাংড়ারঘাট, কুলানন্দপুর, ইষিঘাট, নারায়নপুর ব্রীজ এলাকায় নিয়মিত উত্তোলন করা হয় বালু। এসব পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা কেও পরিচয় দেন আওয়ামীলীগ নেতা, কেও চেয়ারম্যান-মেম্বারের লোক, কারো আবার প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বালু তোলার দাবি।

 

এসব পয়েন্টে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। চক্রের মূল সদস্যদেরকে তারা আটক করতে না পারলেও, সেখানে থানা বালু ভর্তি ট্রাক্টর জব্দ করে প্রশাসন। পরে মোবাইলে কোর্টে সেসব ট্রাক্টর মালিককে অর্থদন্ড প্রদান অথবা তদবিরে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয় আটক করা এসব ট্রাক্টর। অনেক সময় উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের কথা আগেই জেনে যায় বালু উত্তোলন করা চক্রের সদস্যরা। নামে বেনামে অনেকে আবার প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়েই টাকা ঢুকায় নিজেদের পকেটে।

 

বুধবার দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বালুপাড়া গ্রামে করতোয়া নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ১৩টি ট্রাক্টর গাড়ি। সেখানে ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক কোদাল দিয়ে নদীর থেকে বালু কেটে ট্রাক্টরে ভরাচ্ছে। এরপর বালু ভর্তি এসব ট্রাক্টর গ্রামের মাটির রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এতে গ্রামের মাটির রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভড়ে গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত প্রায় ১ সপ্তাহ আগে থেকে করতোয়া নদীর এই চর কেটে বালু উত্তোলন করে আসছেন বালুপাড়া গ্রামের স্থানীয় আলম মিয়া নামের এক ব্যক্তি। চর কেটে উত্তোলন করা এসব বালু ট্রাক্টর প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। ক্রেতা পর্যায়ে এই বালু বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা দামে।

 

ট্রাক্টর চালক গাফ্ফার ও বাবু মিয়া সহ সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টি ট্রাক্টর সেখান থেকে বালু নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে। প্রতিটি ট্রাক্টর প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ বার বালু নিয়ে যায়।

 

প্রতিদিন বালু ভর্তি ট্রাক্টর যাতায়াতের ফলে রাস্তায় বেহালদশা দেখা দিয়েছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে মাটি দিয়ে ভরাট করা রাস্তা। পাকা রাস্তা গুলোও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। আগামী বর্ষা মৌসুমে মাটি দিয়ে ভরাট করা এসব রাস্তা যাতায়াতের জন্য একেবারে অনুপযোগী হয়ে যাবে। ভোগান্তিতে পড়তে হবে নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ।

বালু উত্তোলনকারী আলম মিয়া বলেন, নদীর চর জেগে উঠেছে। তাই বালু উত্তোলন করছি। আমার মত আরো অনেকেই বালু তুলছে। প্রতি বছরই এই জায়গা থেকে কেও না কেও বালু তোলে।

 

ঘোড়াঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, এই উপজেলায় কোন বালুমহল নেই। একটি চক্র মাঝে মাঝেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে। খোঁজ পেলে আমরা সাথে সাথে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসি। ভূগর্ভস্থ সম্পদ অবৈধভাবে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।