ভেজাল কীটনাশক প্রয়োগ করায় কপাল পুড়লো নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার অর্ধশতাধিক তরমুজ চাষীর। জেনেটিকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর ‘এগবেন ৫০% এফ’ তরল কীটনাশক ব্যবহার করায় নষ্ট হয়ে গেছে ১ হাজার একর জমির তরমুজের চারা। তরল এই কীটনাশক ব্যবহারে তরমুজ চারাগুলো জট ভেদে নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছেন উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ২২ নম্বর গ্রামের কৃষকেরা।

কীটনাশক কোম্পানির স্থানীয় ডিলার যুবরাজ এবং শামীমের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক’রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পত্রে বলা হয় স্থানীয় জনতা বাজার কীটনাশক দোকান থেকে ঔষধ ব্যবহারের কিছুদিন পর থেকে তরমুজগাছ জট বেঁধে গেছে। কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা মোবাইল রিসিভ করছেন না।

সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্থ তরমুজ ক্ষেত পর্যবেক্ষণের সময় চাষীরা জানায়, এই এলাকায় প্রায় একশ’ কানির (১ হাজার ৬০০ একর) উপরে তরমুজ চাষ হয়। এরমধ্যে তারা প্রায় ৫০ জন চাষী ৬০ কানি ( ৯ হাজার ৬০০ একর) জমিতে এই ‘এগবেন ৫০% এফ’ ব্যবহারের পর তাদের তরমুজগাছ ব্জট বেঁধে গেছে। যা আর সেরে উঠার নয়। কিন্তু যে ক্ষেতগুলোতে এই কীটনাশক দেওয়া হয়নি সে ক্ষেতের তরমুজ চারা খুব ভাল রয়েছে। তারা আরো জানান, যুবরাজের দাসপাড়া বাজারের কীটনাশকের দোকান এবং শামীমের জনতা বাজারের কীটনাশকের দোকান থেকে প্রতিবছর আমরা লাখ লাখ টাকার কীটনাশক ক্রয় করি। ওষুধ ও আমরা সঠিক নিয়মে এবং সঠিক মাত্রায় দিয়েছি। কিন্তু কোম্পানির ভেজাল কীটনাশকের কারণেই আমাদের সব চালান শেষ।

এই তরল কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আবুল কালাম জানান, সে ব্রাক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বর্গা জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। খবির, তুহিন ও রায়হান নামের তরমুজ চাষীও একই কথা জানান। একই এলাকার জামাল নামের আরেক তরমুজ চাষী জানায়, বছরে ২৪ হাজার টাকা কিস্তিতে মহাজন থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। অথচ এই ভেজাল কীটনাশক আমাদের সব আশা শেষ করে দিয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাইম উদ্দিন আহমেদ জানান, সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃষি এবং স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারসহ একটা সমন্বয়টিম গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুবাস চন্দ্র পাল জানান, কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধি এবং ডিলার’রা আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করবে। এবং তরমুজ গাছের জট সারার জন্য নতুন করে কীটনাশক সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

কিন্তু জেনেটিকা ইন্ডাস্ট্রিজের স্থানীয় ডিলার যুবরাজ এবং শামীম ভেজাল কীটনাশকে ফসল নষ্টের দায় অস্বীকার করেন। এছাড়া কোম্পানির দায়িত্বশীল কারো সাথে যোগাযোগের উপায় না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদে পেইজে দেওয়া মোবাইল নাম্বারে কথা হয়। জনৈক কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে বলেন, এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখছি, আপনাদের সাথে কথা বলার দরকার মনে করিনা।

বার্তাবাজার/এম আই