নবম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে টানা চারবার সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এর আগে সপ্তম জাতীয় সংসদেও ক্ষমতায় ছিলো দলটি। আওয়ামী লীগ সরকারের এই পাঁচবারের শাসন আমলের বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় একাধিক মন্ত্রী হলেও বরাবরই উপেক্ষিত ছিলো কুমিল্লা উত্তর জেলা।

এতে কুমিল্লা উত্তর জেলার ৭টি উপজেলার ৫টি সংসদীয় আসনের প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বারবার। তাছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকেও বারবার বঞ্চিত কুমিল্লা উত্তর, এই পদটিও তিন তিনবার দখলে রেখেছে কুমিল্লা দক্ষিণ। তবে বিএনপি সরকার আমলে কুমিল্লা উত্তরে একধিক পূর্ণ মন্ত্রী ছিলো।

জানা যায়, দেশের ঐতিহ্যবাহি জেলাগুলোর একটি কুমিল্লা। কুমিল্লায় ১৭টি উপজেলার মধ্যে রয়েছে ১১টি সংসদীয় আসন। এই আসনগুলোকে ঘিরে কুমিল্লাকে সাংগঠনিক ভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার একটি হচ্ছে কুমিল্লা উত্তর জেলা, অপরটি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চারবার এবং এর আগে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ মোট পাঁচবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয় পেয়ে সরকার গঠন করেন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লায় ১২ আসনের ৭টিতে জয় পেয়েছিলো আওয়ামীলীগ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আসন সংখ্যা পূর্ণবিন্যাস করে কুমিল্লায় ১১টি আসন করা হয়। আর এই ১১ আসনের ৯টিতেই আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিলো।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১ আসনের ৭টিতে আওয়ামীলীগ, দুটিতে আওয়ামীলীগ নেতৃতাধীন মহাজোটের জাতীয় পার্টি ও দুটিতে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্খীরা নির্বাচিত হয়। একাশদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসনের ১১টিতেই জয় পায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে ৭টি আসনে আওয়ামীলীগ ও ৪টিতে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রাথর্ীরা জয় পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লার দক্ষিণ জেলা থেকে এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, মো. মজিবুল হক, আ হ ম মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মন্ত্রী হলেও উপেক্ষিত হয় কুমিল্লার উত্তর জেলা।

কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রী হতে পারেন কুমিল্লা-১ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনের জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও কুমিল্লা-৭ আসনের ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপির নাম মানুষের মুখে মুখে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী পরিষদের তালিকায় তাদের নাম না থাকায় কুমিল্লা উত্তরের ৫ সংসদীয় আসনের প্রায় ১৯ লক্ষ ভোটারের মাঝে হতাশ সৃষ্টি হয়েছে।

কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ রাজিব আহমেদ বলেন, এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত কুমিল্লা উত্তর জেলা এখন আওয়ামীলীগের ঘাঁটিতে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারনে তা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে এ এলাকায় মন্ত্রী না পাওয়ায় মানুষজন হতাশার মধ্যে ছিলো। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হলেও তাদের কেউ মন্ত্রী না হওয়ায় মানুষ হতাশার গ্রস্থ হয়েছে। তারপরও আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিরাশ করবেনা।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন বলেন, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা উত্তর ও কুমিল্লা দক্ষিণ এই চারটি মহকুমা ছিলো। কিন্তু সবগুলো জেলা হলেও কুমিল্লা উত্তর এখনো দাপ্তরিক জেলা হতে পারেনি। এ নিয়ে পাঁচবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় কিন্তু আমরা এখনো একটি মন্ত্রী পাইনি, যেখানে বিএনপি আমলে চার চারজন মন্ত্রী ছিলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় আমি বিষয়টি তুলে ধরেছি। আমি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমাদের এবার নিরাশ করবেনা।

বার্তাবাজার/এম আই