কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে টানা দু‘বারের সংসদ সদস্য ছিলেন ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। জাহাঙ্গীর সরকারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের পূরো পরিবার, তাঁদের অনুসারী ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আরেকজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানও প্রকাশ্যে তাঁরা জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করছেন। এ আসনে মুখে মুখে দলের লোকজন সবাই নৌকার পক্ষে, কিন্তু তলেতলে বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রতীক ঈগলের পক্ষে। এ অবস্থায় এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।

১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার জোটগত কারনে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করাসহ বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন সহজভাবে জয়ী পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে সেবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ইউসুফ হারুন আরেকবার সহজভাবে জয়লাভ করেন। এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি। তবে এবার ইউসুফ হারুনকে ঠেকাতে জাহাঙ্গীর আলম সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। তার সঙ্গে প্রকাশ্যে মুরাদনগর তৃণমূল আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের পরিবার, মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ডক্টর আহসানুল আলম সরকার কিশোর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম খসরুসহ ৭জন ইউপি চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে জাহাঙ্গীর সরকারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, ‘মুরাদনগর উপজেলায় শান্তি রক্ষার্থে ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বাঙ্গরা বাজারে জাহাঙ্গীর সরকারের নির্বাচনী ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম খসরু। তাঁকে ঘিরে আছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও তাঁর অনুসারী দলীয় লোকজন। সেখানে তিনি কোন কেন্দ্রে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, তার দিকনির্দেশনা দেন।

মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম স্বপন ও মুরাদনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দু’বারের সভাপতি সৈয়দ রাজিব আহম্মেদ গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঈগল প্রতীকের গণসংযোগ করেন।

এ আসনে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগের মনোননয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে গত ২০১৮ সালে দলের হয়ে একবারই জয়ের মুখ দেখেছেন। অপরদিকে জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ আসনে ১৯৯১ ও হোমনা তিতাস আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ এবং পরে ২০০৬, ২০০৮ ও ২১০৪ সালে আবারো মুরাদনগর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। তবে ২০১৪ সালে মুরাদনগর আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার কারনে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জাহাঙ্গীর সরকার সে সময় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় এবং সে সময় মাঠে তেমন কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা না থাকায় ইউসুফ হারুন এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন।

মুরাদনগরে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নের ১৯৮টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৭৯ জন। পুরুষ ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন, নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৬ জন। তন্মধ্যে হিজড়া ভোটার রয়েছে ৩ জন।

বার্তাবাজার/এম আই