সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম পর্বের পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার লালমনিরহাটের একজন চাকরিপ্রার্থীও অলৌকিকভাবে ওই পরীক্ষায় পাস করেছেন (মৌখিক পরীক্ষা জন্য নির্বাচিত হয়েছেন)। তার নাম মো. রফিকুল ইসলাম। ৪১২৩৫৯১ রোল নম্বরধারী ওই প্রার্থীর ওএমআরে শিটে সেট কোড ছিল ‘যমুনা’। তিনি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী। বাবার নাম মো. শামসুল হুদা।

গত ২০ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলে নির্বাচিতদের তালিকায় রয়েছে রফিকুলের রোল নম্বর। অথচ ৮ ডিসেম্বর পরীক্ষার দিন সকালে তিনি গ্রেপ্তার হন। রফিকুল ইসলামের প্রবেশপত্র, ব্যবহৃত ডিভাইসের তথ্য এবং গ্রেপ্তারের দিনের ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যমের  হাতে এসেছে। পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর, ছবি ও ভিডিও যাচাই করেছে গণমাধ্যম। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলে ওই প্রার্থীর রোল নম্বর দেখা গেছে। এ ছাড়া, এলাকায় খোঁজ নিয়েও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৮ ডিসেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম পর্বের (বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগ) পরীক্ষায় ব্যাপক জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রক্সি, প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় দেড়শজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে চাকরিপ্রার্থীর পাশাপাশি জালিয়াতিতে সহযোগিতাকারীও ছিলেন। তাদের নামে প্রশাসন মামলাও করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিটু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের উত্তর বাইরে থেকে দেওয়ার চুক্তি করে একটি চক্র। এ তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জালিয়াতির চেষ্টা করা চাকরিপ্রার্থী ও সহযোগীদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে ছিলেন রফিকুল ইসলামও।

জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও কিভাবে তিনি উত্তীর্ণ হলেন জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জানি না ওই প্রার্থী পাস করেছে কিনা। কারণ তার রোল আমাদের জানা নেই। অনেকেই তো বহিষ্কার হয়েছে। সবার রোল নম্বর আমাদের মনে রাখা সম্ভব না। অধিদপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক ফল পাঠালে রোল নম্বর মিলিয়ে দেখব।

এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।

অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা (নিয়োগ) এস এম মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা ভেবে দেখব।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়োগ কমিটি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াত গণমাধ্যমকে বলেন, বুয়েটের কারিগরি টিম দক্ষতার সাথে এই ফল প্রস্তুতের কাজ করে থাকে। এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখব।

গত ৮ ডিসেম্বর রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় একযোগে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন চাকরিপ্রার্থী। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তাতে অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কিছু প্রার্থী। তারা লিখিত আবেদন ও মানববন্ধন কর্মসূচির পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট আবেদনও করেছেন। তবে রিট নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই গত ২০ ডিসেম্বর রাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম পর্বের ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৩৭ জন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে।

বার্তা বাজার/জে আই