বহু প্রতিক্ষার শেষে দোহাজারী-কক্সবাজার ১০২ কি. মি. রেল লাইন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুর ১টায় প্রধানমন্ত্রী আইকনিক স্টেশনে সুধি সমাবেশে বক্তব্য শেষে এই পথে রেল চলাচল উদ্বোধন ঘোষনা করেন। দুপুর দেড়টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে রামু স্টেশনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছেড়ে যায় প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা ট্রেনটি। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হলো কক্সবাজার।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে বেলা ১১টায় কক্সবাজারের ঝিলংজায় আইকনিক রেল স্টেশনে সুধি সমাবেশে যোগদেন। দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনে পৌঁছালে শিল্পীদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায়।

রেল মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।

অতিথিদের বক্তব্যের পর দুপুর ১টায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও কক্সবাজার রেলস্টশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

নব নির্মিত আইকনিক স্টেশন ঘুরে দেখা শেষে আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। পতাকা উড়িয়ে হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে দুপুর দেড়টায় কক্সবাজার থেকে রওনা করে ২টায় রামু স্টেশনে পৌছান প্রধানমন্ত্রী।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত বন এলাকায় রেললাইন স্থাপন করায় বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।

কক্সবাজার সদর ইউনিয়নের ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা বিশিষ্ট স্টেশনটি নির্মাণে বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু, রামু থেকে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল কক্সবাজারে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা। এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাকি ৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের। ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্প নির্মান কাজ শুরু হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই রুটে আনুষ্টানিক ভাবে রেল চলাচল শুরু হবে।

বার্তাবাজার/এম আই