নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নোংরা পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের জীবন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেখানে সুস্থতার প্রথম শর্ত, সেই সুস্থ হওয়ার প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনা। তাও আবার হাসপাতালের ভেতর ও বাহিরজুড়ে। এছাড়াও হাসপাতালটির বর্জ্য অপসারণে সঠিক কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকায় দীর্ঘদিন জমে থাকা আবর্জনায় নোংরা হচ্ছে পরিবেশ। এতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ অবস্থায় দেখে মনে হচ্ছে যেন হাসপাতালটি অসুস্থ। জনবল সংকটের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, দুর্গন্ধে হাসপাতালে থাকতে হয় নাকে- মুখে হাত চেপে অথবা রুমাল চেপে। বারবার বলার পরও এসবের কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মীরা দিনে একবার এসে কোনোরকমে শুধু মেঝে ঝাড়ু দিয়ে যান। এরপর আর কোনো খবর থাকে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখভাগের সীমানা প্রাচীর ঘেরা জায়গাতেই রয়েছে আবর্জনার স্তুপ। হাসপাতালের চার পাশেই ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের এ্যাম্পুল, ব্যবহৃত গজ তুলাসহ অন্যান্য বর্জ্য পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের প্রতিটি সিঁড়ি এবং মেঝেতে ধুলাবালি স্তর ও চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, স্যালাইনের ব্যাগ, রক্তের ব্যাগ, ক্যানুলা,যান্ত্রায়ংশসহ ইত্যাদি যত্রতত্রে পড়ে রয়েছে। রোগীর শয্যাগুলোতে ছাড়পোকার ছড়াছড়ি। সেগুলো কামড় বসাচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের শরীরে। লোহার তৈরি নড়বড়ে বেড, ওষুধ রাখার ট্রেতেও পড়েছে মরিচা তালা- চাবিও ভাঙ্গাচুরা। বৈদ্যুতিক পাখাগুলো নষ্ট। কোনটি চলে আবার কোনটি চলে না! পুরুষ ওয়ার্ডের ৪টি শৌচাগার প্রায় ৬ মাস ধরে নষ্ট। মলমূত্র শৌচাগারের মেঝেতে সরিয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মল মূত্রের দুর্গন্ধে এর আশপাশ দিয়ে যাওয়া যায় না। সেখান থেকে উড়ছে মশা-মাছি। হাঁটাহাঁটি করছে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ। শৌচাগারের ময়লা আবর্জনা ওয়ার্ডের মেঝেতে ছুঁই ছুঁই অবস্থা। ফলে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডে। এছাড়া মহিলা ওয়ার্ডের গোসলখানা- শৌচাগারগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী। শৌচাগারে ঢুকতে গেলে দুর্গন্ধে দমবন্ধ হয়ে আসে। শৌচাগারের ভিতরটা স্যাঁতসেঁতে। পানি জমে মেঝে পিচ্ছিল হয়ে গেছে। শৌচাগারে বৈদ্যুতিক বাতি নেই। তাছাড়া ডাস্টবিনের ময়লা সময় মত পরিষ্কার না করায় চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বেশিরভাগ শৌচাগারে পানি থাকেনা।

উপজেলার গয়াবাড়ী থেকে আগত ডালিম মিয়া জানান, আমি বেশ-কয়েকদিন ধরেই এ আবর্জনাগুলো দেখছি। প্রতিদিনই ভাবি আজকে মনে হয় এগুলো পরিষ্কার করবে, কিন্তু না। স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি এখন আবর্জনায় ভরা। এটি পরিষ্কারে কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছাই যথেষ্ট।

উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন থেকে আসা এক রোগীর স্বজন জাহিদুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে মানুষ আসে সুস্থ হতে। কিন্তু এখানে যে পরিবেশ, তাতে উল্টো অসুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে হবে। শৌচাগারের দরজা খোলামাত্র দুর্গন্ধ সারা ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ে। তখন রোগী ও রোগীর স্বজনদের নাকে- মুখে কাপর গুঁজে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।

মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা জানান, ভর্তির সময় হাসপাতাল থেকে যে বিছানার চাদর দেওয়া হয়েছে, এক দিন পরেই তা নোংরা হয়ে যায়। বারবার বলার পরও তা পরিবর্তন করা হয়না। বিছানায় ছারপোকার অত্যাচারে রাতে রোগীরা ঘুমাতে পারে না। ছারপোকার কামড়ে শরীর ফুলে যায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনরকমে শৌচকর্ম সারা গেলেও গোসলের পরিবেশ নেই এখানে।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত একবার শয্যার চাদর পরিবর্তন করার নিয়ম রয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর সুস্থতার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এখানে তা যথাযথভাবে হতে দেখা যায় না। আমরা প্রায়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলি, কিন্তু কাজ হয় না! এছাড়া হাসপাতালের পেছনে রয়েছে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের থাকার আবাসিক এলাকা। সেখানে আছে ঝোপঝাড় আর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা। পানি পচে প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাসিন্দারা বলছেন, পুরো হাসপাতাল ময়লার মধ্যে ডুবে আছে। বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে।

ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান বলেন, সময়মতো বেডসিট পরিবর্তন করা হয়। চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অচ্ছিষ্ট অংশ প্রথমত অস্থায়ী ডাষ্টবিনে রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। আমাদের হাসপাতালে মেরামতের জন্য শৌচাগার ব্যবহার কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে।

বার্তা বাজার/জে আই