গত শতাব্দীর সত্তর দশকে বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন কবি সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তাদের একজন নাজমুল হক নজীর। আজ তাঁর ৬৯ তম জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তিনি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শ্লোগানের কবি নাজমুল হক নজীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি। বলা চলে কবিতার জন্য তিনি একজীবন ব্যয় করেছেন। তাঁর কবিতায় মধ্যবিত্তের জীবনচিত্র আর সমাজচিত্র শিল্পদৃষ্টিতে দারুণভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। কবিতায় মিথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন কিশোরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কবির জীবনী থেকে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তিনি কখনো কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নেননি এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বরণের পর তিনি নিজেকে আর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেননি।

পেশাগত পরিচয়ে নাজমুল হক নজীর সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন পাক্ষিক ‘নজীর বাংলা’র প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। দেশে ও দেশের বাইরে লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লিখেছেন নিয়মিত। প্রথম কবিতা ‘হাওয়া থেকে পাওয়া’ ও প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বৈরিণী স্বদেশ’।

এছাড়া নাজমুল হক নজীরের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘কালো জোছনার এক চুমুক’, ‘কার কাছে বলে যাই’, ‘ঘুরে দাঁড়াই স্বপ্ন পুরুষ’, ‘স্বপ্ন বাড়ি অবিরাম’, ‘এভাবে অবাধ্য রঙিন’, ‘ভিটেমাটি স্বরগ্রাম’, ‘বকুল ভেজা পথঘাট’ প্রভৃতি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। ‘সাধনার ফসল’, ‘আবার শ্লোগান’ ও ‘ইষ্টি কুটুম মিষ্টি কুটুম’ কবি’র ছড়ার বই। সম্পাদিত গ্রন্থ গাজী খোরশেদুজ্জামানের কিশোর কবিতা ও ফরিদপুর অঞ্চলের ইতিহাস বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ ‘আমাদের ফরিদপুর-১ অঞ্চল’।

সাহিত্যে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ভারতের রাহিলা সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক, কবি শামসুর রাহমান স্মৃতি পুরস্কার, কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস স্মৃতি পদক, শ্রী হরিদর্শন পুরস্কার, আমীর প্রকাশন সাহিত্য পুরস্কার, গীতিকার ক্লাব সম্মাননা, এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সম্মাননা, মেরিট অব ডিএক্স পুরস্কার, নির্ণয় কবি বাবু ফরিদী স্মৃতি পদক, মির্জা আবুল হোসেন পদক ও পাঠক আন্দোলন বাংলাদেশ সাহিত্য পুরস্কর প্রভৃতি।

প্রিয় এই কবি ২০১৫ সালের ২৩শে নভেম্বর রাজধানী ঢাকাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন কবিকে তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গণ ঝর্ণাধায় সমাহিত করা হয়।

বার্তাবাজার/এম আই