ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষীদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। এ বছর জেলায় প্রায় ৫১ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন টমেটো বিক্রি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ১২৮ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৫ হেক্টর, সরাইল উপজেলায় ৫ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ২ হেক্টর, নবীনগর উপজেলায় ১ হেক্টর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১ হেক্টর, আখাউড়া উপজেলায় ৩ হেক্টর, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হেক্টর, বিজয়নগর উপজেলায় ৮ হেক্টর ও নাসিরনগর উপজেলায় ৫২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে।

তবে জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলা নাসিরনগরে ৫২ হেক্টর জমিতে (৭.৫ বিঘায় ১ হেক্টর) এ বছর গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে। চাষীরা তাদের জমিতে বারি-৮ ও মঙ্গলরাজা জাতের টমেটোর চাষ করেছেন। চলতি বছর শুধু নাসিরনগর উপজেলাতেই প্রায় ২০ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওর বেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ২২ হেক্টর (৪০০ বিঘা) জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। টমেটোর বাগানগুলো বেশীর ভাগই করা হয়েছে বাড়ির আঙিনা ও উঁচু জায়গায়। ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। বাগান থেকেই আকার ও মান ভেদে প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে।

উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের কৃষক হাসিম মিয়া জানান, সারা বছরই তার এই জমি পতিত থাকতো। গত প্রায় তিন মাস আগে কৃষি অফিসের লোকজন তার বাড়িতে এসে বলেন, তিনি যদি তার পতিত জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করে তাহলে তিনি লাভবান হবেন। তাদের পরামর্শে তিনি তার ৪০ শতাংশ জমিতে টমেটোর চারা রোপন করেছেন। তাতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যেই তিনি টমেটো বিক্রি শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন।

উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমি ৬০ শতাংশ জায়গা বর্গা নিয়ে ৫৫ হাজার টাকা খরচ করে গ্রীষ্মকালীর টমেটোর চাষ করেছি। এ পর্যন্ত আমি তিন লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি।

একই ইউনিয়নের কৃষক রফিক মিয়া বলেছেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি বাড়ির আঙ্গিনার ২৫ শতাংশ পতিত জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করেছেন। টমেটোর ফলন ও ভালো হয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন।

বিভিন্ন চাষীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে খরচ কম, লাভ বেশী। তাই তারা টমেটোর চাষ করেছেন। আগামীতে উপজেলায় টমেটোর চাষ আরো বাড়বে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলতি বছর ১২৮ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করা হয়েছে। আমারা জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের উদ্যোক্তা তৈরি করছি। টমেটোর ফলনও এ বছর ভালো হয়েছে। আশা করি এ বছর জেলায় প্রায় ৫১ কোটি টাকার টমেটো বিক্রি করা হবে। ফলন বাড়াতে আমরা চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।

বার্তাবাজার/এম আই