গল্পটা এমন, মধুমতি নদীতে বাড়ি ভাঙছে সাতবার। অবশেষে ঘরও নেই, জমি নেই; কি করবেন রিবা বেগম? স্বামী ছানোয়ার মোল্যা প্যারালাইস হয়ে ছয় বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

এমন সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ঘোষণা আসে গৃহহীনদের জমিসহ ঘর দেওয়া হবে। রিবা বেগম এ কথাটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানতে পেরে যোগাযোগ করেন ইউএনও’র সাথে। এরপর কিছু কাগজপত্র জোগাড় করে জমা দিয়েই তিনি পেয়ে যান জমিসহ একটি ঘর। এখন সেই ঘরেই রিবা বেগমের সুখের সংসার। বলছিলাম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকার ঘরহীন রিবা বেগমের কথা।

তার বাড়ির পাশের এলাকায় তৈরি হয়েছে নগরের সব সুবিধা নিয়ে আশ্রয় প্রকল্প ‘স্বপ্ননগর’। সেখানেই তিনি পরিবার নিয়ে সুখে বসবাস করছেন। রেবা বেগম বলেন তিনি কখনোই ভাবেননি এমন একটি সেমি পাকা ঘরে তিনি বসবাস করবেন। তার ঘরে থাকবে বিদ্যুৎসহ নানা সুব্যবস্থা। আর এমনটাই সম্ভব হয়েছে সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগের কারণে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার জাটিগ্রাম আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ষাটোর্ধ বৃদ্ধা রহিমা বেগম। স্বামী খোরশেদ মোল্যা মারা গেছেন প্রায় ৩৫ বছর আগে। সব কষ্ট বুকে জমিয়ে নারী হয়েও পুরুষদের মতোই খেত-খামারে কাজ করেছেন সন্তানদের মানুষ করার জন্য। স্বল্প আয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে সংসারের চাকা ঘুরিয়ে কখনও নিজে বাড়ির মালিক হবেন, সেটি স্বপ্নেও ভাবেননি। সেখানে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা তো কল্পনাই ছিল না। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রহিমার জীবন চাকা। এখন নিজেই লালন-পালন করছেন ছাগল, হাঁস-মুরগি। চাষ করছেন শাকসবজি। এসব বিক্রি করে আলমারি, শোকেজ, রাইস কুকারও কিনেছেন। অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা রহিমার স্বপ্নের রাজমহলে এখন সুখের বন্যা বইছে।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় জমিসহ গৃহ পেয়ে এরকম সাত শতাধিক উপকারভোগীর ভাগ্য বদলে গেছে। একসময় অসহায় ঘরহীন এসব মানুষের কেউ থাকতেন রাস্তার পাশে, কেউ অন্যের বাড়ি বা জমিতে আশ্রিত, কেউবা নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত। ছিলনা নিজের কোন ঠিকানা কিংবা কোন মাথা গোঁজার ঠাঁই। ছিন্নমূল এসকল মানুষের অসহায়ত্বকে উপলব্ধি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ উপলক্ষে তিনি ঘোষণা দেন দেশের কোন মানুষ আশ্রয়হীন থাকবেনা।

প্রধানমন্ত্রীর এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আলফাডাঙ্গা উপজেলায় তিনটি ধাপে সর্বমোট ৭৩৫টি ঘরের মালিকানা উপকার ভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নের প্রেক্ষিতে গত ২০ মার্চ টাস্কফোর্স কমিটি সভার মাধ্যমে এ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করার জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। গত ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৫৯টি উপজেলার সাথে আলফাডাঙ্গা উপজেলাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা দেন।

বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে দেশব্যাপী আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চতুর্থ পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমিসহ গৃহ হস্তান্তর করেন। গণভবন থেকে পরিচালিত অনুষ্ঠানটি আলফাডাঙ্গা উপজেলা হলরুমেও এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এসময় প্রায় শতাধিক উপকারভোগী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে উপকারভোগী রেবা বেগম ও রহিমা বেগমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তারা তাদের ভাগ্য বদলের গল্প শোনান।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান, পৌর মেয়র আলী আকসাদ ঝন্টু, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাস, আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবু তাহের, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম, আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম প্রমুখ।

বার্তা বাজার/জে আই