পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বাঙালিদের সঙ্গে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব। এ ছাড়া আরো সমস্যা রয়েছে সেখানে। নানামুখী এসব সংকট নিরসনে শুরুতেই বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত সম্প্রীতি স্থাপন করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিজিএমইএ অডিটরিয়ামে বিজিএমইএ ও সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজের (সিসিআরএসবিডি) যৌথ উদ্যোগে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সংকটের গতি-প্রকৃতি ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আঞ্চলিক সেমিনারে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদের ডিন আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক চবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবদুল্লাহ আল ফারুক।

আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি হয়। এরপর এখানে ৭২৩টি মসজিদ, ১৮৯টি মন্দিরসহ এক হাজার ৮৪২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়।

এ ছাড়া ওই অঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হয়। কিন্তু এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত। এ নিয়ে পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে বান্দরবান বেশি অস্থির। আর সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কুকি-চিনের নাম বেশ শোনা যায়।
মূলত ভূ-রাজনৈতিক কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কিছু গোষ্ঠী এখানকার সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা দিয়ে এ অঞ্চলকে বাফার স্টেটে পরিণত করতে চাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সংকট নিরসনে তিনি বলেন, সেখানে বাঙালিদের প্রবেশ ঘটায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে আইডেনটিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। তাই বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজনের মাধ্যমেই তাদের মধ্যকার এই দূরত্ব কমানো সম্ভব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর স্বতন্ত্র এবং নিজ নিজ সংস্কৃতিগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে।

সেমিনারে প্যানেল স্পিকারের বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছেন।

এটি একটি কার্যকর পলিটিক্যাল অ্যাপ্রোচ। তবে অনেকেই এই শান্তিচুক্তিকে ঠিকভাবে নেয়নি। তারা এটিকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছে। এ অঞ্চল ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। তা ছাড়া যেহেতু এই অঞ্চলে বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সমান, তাই দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অঞ্চলের সমস্যা নিরসন করা উচিত।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এটা আমার খুব খারাপ লাগে। বাংলাদেশে কী হয়েছে, দেশ কোথায় গেছে যে আওয়ামী লীগকে পালাতে হবে? কে পালাবে? পালানোর মতো কী পরিবেশ হয়েছে? আমাদের কথায় কথায় বলে যে পালানোর সময় পাব না। তাদের নেতা পালিয়েছেন লন্ডনে মুচলেকা দিয়ে। তাদের নেতা জেলে, মামলার আসামি হয়ে। আমরা পালাব কেন? আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই তো দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরাই তো স্বাধীন করেছি। এটা আমাদের দেশ। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির এ দেশ।’