গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছিলেন- শনিবার (২৯ জুলাই) বেলা এগারটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ঢাকার সব প্রবেশপথে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ এবং আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ সহ গাড়ি ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাভারে বিএনপির পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি।

তবে সাভারে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশ, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির সামনে দাঁড়াতেই পারে নাই বিএনপি’র নেতাকর্মীগণ।

‘বিএনপি’র আগুন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় প্রস্তুত ছিলো উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: এনামুর রহমান এমপি’র উপস্থিতিতে এবং সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব এর দিকনির্দেশনায় শান্তি সমাবেশ, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজারে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো প্রকার শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে নাই।

তবে দুপুর দেড়টার পরে এখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় ৬টি ককটেল উদ্ধার ও দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে পুলিশের কাছে সোর্পদ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এব্যাপারে পুলিশ জানায়, দুপুরে হঠাৎ করে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আমিনবাজারের হোটেল সোনালী আবাসিকের সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আরো ৬টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

তবে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহা জানান, ককটেল বিস্ফোরণের পরে সাধারণ জনগণ সন্দেহজনকভাবে দুই ব্যক্তিকে পুলিশে সোর্পদ করে। তারপরে তাদের যাচাই বাচাই করে এই ঘটনার সাথে জড়িত না থাকার কারনে তাদের কে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানিয়েছেন আমিনবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও মিছিল চলাকালে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ তারা পেয়েছেন। তবে এবিষয়ে পুলিশ কোনো মন্তব্য করে নাই।

অপরদিকে, শনিবার (২৯ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ সহ কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে দুইটি ইউনিট আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তবে এঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে পুলিশ। এব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক জানান, বিকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের আটকে অভিযান চলছে।

সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুল হক জানান, আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় একটি বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি বাসও ভাংচুর করেছে। তবে কারা করেছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুড়ে যাওয়া বাসটি র‌্যাকারের সাহায্য সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

তবে পুড়ে যাওয়া বাসের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের গাড়ি নবীনগর থেকে ঢাকার আজিমপুরে যায়। আজ বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মির্জানগর ইউলুপ থেকে বাস ঘুরিয়ে নবীনগরে যাচ্ছিলাম। এসময় বাসে আমি ও আমার হেলপার ছিলো। হঠাৎ পেছন থেকে ৫০-৬০ জনের একটি মিছিল সড়কে এসে বাসে ভাংচুর শুরু করে। তাদের অনেকের হাতে চাপাতি ও লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র ছিলো। এসময় তারা ৩-৪টি বাসে এলোপাতাড়ি ভাংচুর করতে থাকে। মুহুর্তেই আমার বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তবে তারা বিএনপি না আওয়ামী লীগের সেটা জানতে পারিনি’।

বাসে অগ্নিসংযোগ এর বিষয়ে আশুলিয়া থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল গফুর জানান, আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকায় আছি। কে বা কারা বাসে আগুন দিয়েছে এটা আমার জানা নেই।

বার্তাবাজার/রাহা