সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২ নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর-অবমানার অভিযোগ উঠে। গত ১০ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টার সময় ইউনিয়নের চকবাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর একদিন পর একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বাদী মুল্লুক হোসেনসহ পাঁচজনকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় আরও একটি এফআইআর দাখিল করেন। যার মামলা নং ১৩।

পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উভয় পক্ষই প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। সোমবার সকাল ১০ টায় উপজেলার চকবাজারে মুল্লুক হোসেন ও অন্য পাঁচজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের ও এজাহারভূক্ত আসামিদের নির্দোষ দাবী করে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ফকিরের সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আলীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ সভাপতি সফর আলী, ইউনিয়ন যুব লীগ সহ সভাপতি করম আলী ও আরিফুল হক সেন্টু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সিরাজুল হক, শ্রমিক লীগ ইউনিয়ন সভাপতি তারা মিয়া সহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রবীণ একজন নেতা মুল্লুক হোসেন। মুল্লুক হোসেন বিগত ৪০ বছর যাবত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে শক্তহাতে ধরে রেখেছেন। জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে গনজোয়ার সৃষ্টি সহ দেশের দুর্দিনে মাঠে ছিলেন। উপজেলা বিএনপি কর্তৃক সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছেন মুল্লুক হোসেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে বিএনপি তেমন সুবিধা করতে না পেরে আওয়ামী লীগ নেতা মুল্লুক হোসেনকে জড়িয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাইতো উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর আলম আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আলফু মিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবমাননা করেন। কার্যালয় ভাঙচুর করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। উল্টো তারা মুল্লুক হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ফরমায়েসী মামলা দায়ের করেন। কোম্পানীগঞ্জ থানাকে অবিলম্বে এই ফরমায়েসী মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন বক্তারা।

এদিকে একই ঘটনায় কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া এবং উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর আলমের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জনসমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল রোববার বেলা ১২টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা কাজী আলফু মিয়া ও আলমগীর আলমকে নির্দোষ দাবী করে অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি করেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধান মন্ত্রীর ছবি এবং কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর আলম প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। মুল্লুক হোসেন আমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, আমার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবমাননা-ভাঙচুর করেছে আলফু-আলমীর। তাদের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা এত বড় অপরাধ করে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। আমি এই সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর-অবমাননা এবং কার্যালয় ভাঙচুরের পেছনে বালু মহাল ইজারা পক্ষের লোকজনে ইন্ধন দাবী করে লন তিনি।

এ সময় তিনি আরও জানান, অবৈধভাবে ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় ইজার পক্ষের লোকজন আমার ক্ষিপ্ত ছিল

কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়াকে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন ফোন বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়না।

বালু মহাল ইজারাদার অংশিদার মাসুক মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, ইজারাবিহীন স্থান থেকে বালু উত্তোলনের প্রশ্নই উঠেনা। মুল্লুক হোসেনের ছেলেপেলেরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেন।

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার সময় ২নং পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ধলাই দক্ষিণ বালু মহালে ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলনে জটিলতা নিরসনে এক বৈঠকে মিলিত হোন

ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি মুল্লুক হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া, উপজেলা বিএনপি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর আলম, উপজেলা বিআরডিবি চেয়ারম্যান ও ইজারাদার অংশিদার মোহাম্মদ আলীসহ একাধিল ব্যক্তি। এ সময় দুই পক্ষই তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া উত্তোজিত হয়ে কার্যালয় কক্ষের টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলেন। এরপর দুই পক্ষই উত্তোজিত হয়ে উঠলে কার্যালয় কক্ষে টাঙানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি মাটিতে আছড়ে পরে। পরবর্তীতে আলফু মিয়া ও আলমগীর আলম চেয়ারম্যানসহ চার জনের বিরুদ্ধে কার্যালয় ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবমাননার অভিযোগ আনেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুল্লুক হোসেন। অভিযোগের ভিত্তিতে উল্লেখিত চারজন সহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মুল্লুক হোসেন। এর একদিন পরে মুল্লুক হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও মামলা এবং বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপজেলায় থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল হক।

পাল্টাপাল্টি মামলার বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ হিল্লোল রায় জানান, উভয় পক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলার দায়ের হয়েছে। আমরা আরও তদন্ত করছি।

বার্তাবাজার/এম আই