ছোট্ট একটি রুমে বিছানার উপর মায়ের কোলে বসে আছে শিশু ইসরাত জাহান সাইকা। হাতের মোবাইলে বাবার ছবি। সাভারের বলিয়ারপুর মহিলা মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। কান্নাজড়িত কন্ঠে বার্তা বাজার প্রতিনিধিকে সে জানায়, ওর বাবার মরদেহ ফিরে পেতে চায়।

রোববার (১৬ জুলাই) দুপুরে সম্প্রতি সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরে একটি ফার্নিচারের কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া সাইফুল ইসলাম (৪১) এর ঢাকার সাভারের বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাসায় গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সাইফুল ইসলামের স্ত্রী নাছিমা আক্তার স্বামী হারানোর শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। তার কোলে থাকা ৮ বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান সাইকা বাবার ছবি নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। এসময় তিনি মেয়েকে লক্ষ্য করে বলছিলেন, ‘তোমার বাবারে চাও, সরকারের কাছে কও- আমার বাবারে তাড়াতাড়ি দেশে পাঠাও’।

এসময় নাছিমা আক্তার জানান, ‘আমাদের আর আয়ের কোনো লোক নাই, ওই একটা লোকই ছিলো, সে চইলা গেছে। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে গেছিলো; কিন্তু সেইরকম আয় করতে পারে নাই। এখন আমার এই মেয়ে নিয়ে কীভাবে চলবো? সরকারের কাছে- প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই দাবী, আমার স্বামীর লাশটা যেন তাড়াতাড়ি দেশে আনার ব্যবস্থা করেন, আর আমার মেয়েটার ভবিষ্যৎ এর জন্য কিছু করেন’।

সাইফুল ইসলামের মা নবিজা বেগম (৬৫) শেষবারের মতো ছেলের চেহারা দেখতে চান। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার চাওয়া যেন দ্রুত ছেলের মরদেহ দেশে আনা হয়।

বার্তাবাজার প্রতিনিধিকে তিনি জানান, ‘আমার তো আয় করার মতো এই ছেলেটাই ছিলো। আমি একটা রুমে ছেলের বউ আর নাতনিকে নিয়ে অনেক কষ্টে থাকি। এখনতো কামাই করার আর কেউ নাই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ যেন আমার নাতনি আর ছেলের বউকে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি সেজন্য সাহায্য করে।

সাইফুল ইসলামের ভাই মো: আজাদ হোসেন ভাইয়ের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার দাবী জানিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ভাই তো একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা, দেশের জন্য আয় করতেই তো তিনি বিদেশে গেছেন। এখন তিনি নাই, তার স্ত্রী, মা এবং একমাত্র মেয়ে রয়েছে, তারা চলবে কীভাবে? এদের জন্য কিছু করতে আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাই।

একই কথা জানান নিহত সাইফুল ইসলামের আরেক ভাই মো: ইমরান হোসেন। বার্তা বাজারকে তিনি জানান, ‘আমরা চার ভাই, সাইফুল ইসলাম সবার বড়, তিনিই আয় করতেন। এখন আমরা সবাই একরকম পথে বসে গেলাম। ভাইয়ের স্ত্রী, মেয়ে, আমাদের মা ও আমরা তিন ভাই এখন খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।আমাদের সাহায্য করার অনুরোধ জানাই। সেই সাথে বড় ভাইয়ের লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী রইলো।

প্রসঙ্গত, নিহত সাইফুল ইসলাম মৃত আলাউদ্দিন ও নবিজা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। সাইফুল ইসলামের চার ভাই তিন বোনের ভিতর তিনি বড়। ৮ বছর ধরে তিনি সৌদি আরবে দাম্মাম শহরের ট্রাকচালক হিসেবে চাকুরিরত ছিলেন। শুক্রবার রিয়াদ থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় সন্ধ্যার সময় এ ঘটনা ঘটে। এতে সাত বাংলাদেশী সহ মোট নয়জন কর্মী মারা যান। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম একজন।

বার্তা বাজার/জে আই