বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলনা সামগ্রী ক্রয়ে পুকুর চুরির অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এমনকি কয়েকটি বিদ্যালয়ে খেলনা না ক্রয় করা ও নিন্ম মানের পন্য কিনে অতিরিক্ত ভাউচার দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারি অর্থের লোপাট করতে ভুয়া বিল ভাউচার উপস্থাপন করা হয়েছে।

পত্রিকায় লেখালেখি করলে শুধু লাফালাফি বাড়ে কিন্তু কাজের ইমপ্লিমেন্টশন হয় না? বলে মন্তব্য করেন শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান।

সুত্রমতে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন পিইডিপি-৪ (নিড বেজড্ প্লেয়িং এক্সসোরিজ) প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বগুড়ার শেরপুরে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে দেড়লক্ষ করে টাকা বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শেরপুর পৌরসভা, ধড়মোকাম, ভবানীপুর, বাগড়া, বিশালপুর, ধুনকুন্ডি ও শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওই বরাদ্দের অর্থে প্রয়োজনীয় খেলনা সামগ্রী যেমন সিল্পার, সুয়িং(দোলনা), সি-ছ, হ্যাংগিং রিং, ব্যালান্সিং ও জিকজারসহ নানা ধরনের খেলনা ক্রয় করে বিদ্যালয়ে স্থাপন করেন। কিন্তু এসব সামগ্রীর বাজার মুল্যের প্রায় দ্বিগুন দামের বিল ভাউচার তৈরী করে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্তাদের ম্যানেজ করে সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে নেন।

যদিও এসব বরাদ্দের অনুকুলে নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সম্পুর্ন কাজের তদারকি করে প্রত্যায়ন প্রদান করার কথা থাকলেও তা তারা করেননি। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব কাজের গুনগত মান ও বিল ভাউচার যাচাই বাছাই না করে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন প্রদান করেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধড়মোকাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোন খেলনা সামগ্রী স্থাপন করা হয়নি অথচ বিল ভাউচার জমা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া বলেন, বিলতো আগেই নিতে হবে, তাছাড়া খেলনা সামগ্রী ক্রয় করবো কিভাবে? আমি কি বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে আগে কাজ করবো ! তাছাড়া শিক্ষা অফিসের স্যারদের সাথে কথা বলেই এ বিল-ভাউচার জমা দিয়েছি। উপজেলার বিশালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ সরকার বলেন, আমি বিল জমা দিয়েছিলাম, টাকা উত্তোলন করে কাজও করা হয়েছে। তবে উপজেলায় জমা দেয়া বিলের ভাউচারে দুটো সিল্পার ক্রয় বাবদ ৪৮ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে ১ টি সিল্পার স্থাপন করা হয়েছে। অন্যটি স্থাপন করা হয়নি কেন এমন প্রশ্নের সদত্তোর দিতে পারেননি ওই প্রধান শিক্ষক।

এর মধ্যে রয়েছে শেরপুর পৌরসভা, বাগড়া, বিশালপুর, ধুনকুন্ডি ও শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে সর্বশেষ জুন ক্লোজিংয়ের শেষ দিবসে ধড়মোকাম ও ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বপক্ষে প্রকৌশলীর প্রত্যায়ন উপস্থাপন করে বিলের টাকা ছাড় করে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস এমনটাই দাবী করেছেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল ইসলাম ।

উপজেলা প্রকৌশল অধিপ্তরের প্রকৌশলী মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, উপজেলার ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের মধ্যে কয়েকটির প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বাঁকী রয়েছে। তবে বিল ভাউচারের সাথে কাজের বাস্তবতার হেরফের নিয়ে এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট অফিসার ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবী করেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, প্রতিটি স্কুলের কাজের অনুকুলে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন দেয়ায় বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বিল দেইনি। তবে এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে, সংবাদ প্রকাশ না করে কয়েকদিন ধৈর্য ধরুন, স্কুল খোলার পর সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষেই ওই সব কাজের বিলগুলো প্রদান করা হবে। পত্রিকায় লেখালেখি করলে শুধু লাফালাফি বাড়ে কিন্তু কাজের ইমপ্লিমেন্টশন হয়না? বলে ওই কর্মকর্তা দাবী করেন।

বার্তাবাজার/রাহা