হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন। সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বাংলাদেশি ইসলামী পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য, যিনি ১২ জুন ১৯৯৬ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সংসদীয় দলের উপনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী যিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন। তার মায়ের নাম গুলনাহার বেগম।

১৯৬৭ সাল থেকে তিনি নিজেকে ‘দায়িইলাল্লাহ’ হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সু-মহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দু’বার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষা জীবন

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। কামিল পাশ করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান , রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি ,মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন ।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামী-তে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামীর মজলিসে শুরার সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জামায়াত-ই- ইসলামীর নায়েবে আমীরের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।

বৈশ্বিক পর্যায়ে

১৯৭৬ সাল থেকে সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হজ্জব্রত পালন করে আসছেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাস মক্কা মদীনায় যেতেন।

১৯৮২ সালে ইমাম সৈয়দ আলী হোসেনী খমিনির আমন্ত্রণে ইরানের প্রথম বিপ্লব বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেহরান সফর করেন। ১৯৯১ সালে সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে কুয়েত – ইরাক যুদ্ধের মিমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে ইসলামী সার্কেল অফ নর্থ আমেরিকা তাকে “আল্লামা” খেতাবে ভূষিত করে।

১৯৯৩ সালে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে আমেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে ‘গ্র্যান্ডমার্শাল’ পদক দেয়া হয়। দুবাই সরকারের আমন্ত্রণে ২০০০ সালের ৮ই ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কোরআনের তাফসির পেশ করেন ।

লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম ‘শায়েখ আব্দুর রাহমান আস সুদাইসির’ সাথে মাওলানা সাঈদী ও আমন্ত্রিত হন। মাওলানা সাঈদীর হাতে হাত রেখে ছয় শতাধিক অমুসলিম ভাই-বোন ইসলামের সুমহান আদর্শে দীক্ষিত হন।

১ম কারাবরণ: মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৫ সালে প্রথম কারাবরণ করেন।

দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন ২৮ জুন ২০১০ সালে। যুদ্ধাপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করেন। তার রায়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন ও প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে প্রায় ১৫০-এরও বেশি মানুষ মারা যান।

বার্তাবাজার/এম আই