গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩৩ টি বিভাগ রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ টি বিভাগের মধ্যে অদ্ভুত এক ডিপার্টমেন্ট ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রনিকস ইইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই)বিভাগ। এই বিভাগে ২১ জন শিক্ষাক থাকলেও বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন। এই বিভাগে রানিং ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন শিক্ষক বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত আছেন যা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
৬ জনের মধ্যে ড আরিফুজ্জামান রাজীব ইইই( সি) এর বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্বে,ড এটিএম সাইফুল ইসলাম আর্কিটেকচার বিভাগের দায়িত্বে,ড. মো আসাদুজ্জামান খাঁন ফুড এন্ড এগ্রোপ্রসেসিং ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের দায়িত্বে, এবং ইইই বিভাগের রানিং দায়িত্বে আছেন ড. মো আব্দুল্লাহ আল আসাদ। বাকি দুইজন শিক্ষক মো: ইয়াকুব আলী ও ড. মো: রবিউল ইসলাম কোন দায়িত্বে নেই।
এদিকে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক সংকট এর পাশাপাশি ৬ জন শিক্ষকের ৪ জন বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করায় নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা রেজাল্ট না হওয়ায় সেশনজটে আছেন শিক্ষার্থীরা। অন্য বিভাগের মতো ইইই ৫ টি ব্যাচেই সীমাবদ্ধ নয়। ইলেকট্রনিক এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ (ইটিই) দীর্ঘ দিনের আন্দোলন এর পর ইটিই বিভাগ ইইই তে রুপান্তর হওয়া ও আইসিটি এর ইইই বিভাগ ও মূল ইইই এর সাথে একীভূত হওয়ায় মোট ব্যাচ এখন ১০ টি হলেও চেয়ারম্যান দুইজন সহ শিক্ষক টোটাল ৬ জন।
এদিকে দুইজনের মধ্যে ড. আব্দুল্লাহ আল আসাদ মূল ইইই এর দায়িত্বে এবং ড. আরিফুজ্জামান রাজীব ইইই সি (কনভার্ট ইটিই টু ইইই )এর দায়িত্বে আছেন।
এ দিকে উক্ত ইইই সি এর চেয়ারম্যান ড আরিফুজ্জামান রাজীব এর বিরুদ্ধে অন্য সভাপতির পদ ব্যবহার করে স্বাক্ষর জালিয়াতিবকরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড মো: কামরুজ্জামান সহ ৫ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে, প্রক্টর ছাড়া বাকি ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন ড . মো: আব্দুল্লাহ আল আসাদ (সভাপতি ইইই বিভাগ),বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো শাহাজাহান, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান, সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড মোঃ বশির উদ্দিন।
এদিকে ড. মো আরিফুজ্জামান রাজীব এর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আন্ত বিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সময় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের গাছের ডাল ভেঙে মারমুখী আচরণ করা সহ উক্ত বিভাগের কোচ কে খেলার মাঠে কান ধরতে বলে হেনস্তা করার মতো আইন বহির্ভূত কান্ড করেন তিনি।
শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলার মাঠেই তিনি বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছেন এমন নয়। সম্প্রতি স্বাধীনতা দিবস হলে সংযুক্ত এক শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে শেখ রাসেল হলে সিট দখল করে রাখতে শিক্ষার্থীদের উস্কানির ও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।হলের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ঠে অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয় টি হল প্রশাসন ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে অবহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে ও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
অন্য সভাপতির পদ ব্যবহার করে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এর বিষয়ে আরিফুজ্জামান রাজীব এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে ইইই বিভাগের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল আসাদ বলেন, বিভাগের ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন বিভিন্ন বিভাগে সভাপতির দায়িত্ব পালন ও ১০ ব্যাচের জন্য মাত্র ৬ জন শিক্ষক থাকায় ছাত্র ছাত্রী সেশনজটে পড়েছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, যে বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের ব্যস্ততার জন্য তারাও নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা নিতে পারছেন না।
বিভাগীয় সভাপতির পদ ব্যবহার করে আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে আসাদ বলেন, এবিষয়ে গতকাল( ৮ জুন) আমি সহ ৫ জন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।
তার শ্যালিকাকে ২০১৬-১৭ সেশনে নোটারীর মাধ্যমে ভর্তির বিষয়ে বলেন,এটা ততকালীন প্রশাসনের সময়ে হয়েছে। এটা যে শুধু মাত্র আমার শ্যালিকা নয় তত্কালীন প্রশাসনের সময় এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। সম্প্রতি সময়ে যে নিউজ টি করা হয়েছে সেটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও আমাকে হেনস্থা করার জন্য ছাড়া কিছু নয়।
বার্তাবাজার/রাআ