রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ে এইচ এসসি ২০২৪ ইং সালের ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৪৪ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগ মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাছে জমা দিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।এদিকে লিখিত অভিযোগের পরপরই কলেজ প্রশাসন কর্তৃক হঠাৎ নতুন নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়,এই কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত পরিবারের।কলেজ সরকারি হওয়ায় কম খরছের আশায় ভর্তি হয়েছিলো সবাই।কিন্তু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুয়াল বাকের গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা করে এইচএসসি ২০২৪ ইং সালের ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি চাপিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের উপরে।এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে অতিরিক্ত ফি বাদ দিয়ে বোর্ড নির্ধারিত ফিতে ফরম পূরণের দাবি জানালে বিষয়টি আমলে নেয়নি কলেজের অধ্যক্ষ।উল্টো অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ করতে না দেয়া ও ব্যবহারিকে কম নাম্বার দেয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে সমাধান না পায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরদের একাংশ রোববার(২১ এপ্রিল) দুপুরে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।অভিযোগ রয়েছে উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়েও শিক্ষার্থীরা কোন অভিযোগ নিয়ে গেলে বরাবরই খারাপ আচরণ করেছিলো মোহাম্মদ আবুয়াল বাকের।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞান বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়,অধ্যক্ষ তাদের বলেছেন তোমাদের কয়েকজনের ফরম ফিলাপের ফি’র ব্যাপারটা আমি পার্সোনালি দেখবো।তোমাদের আন্দোলন করার প্রয়োজন নেই।তোমরা ব্যাপারটা মিটমাট করো।এবিষয়ে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ও হাতাহাতি হয়।খবর পেয়ে পায়রাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান কলেজ চত্বরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে তাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগের জন্য ২১২০ টাকা এবং বিজ্ঞানের জন্য ২৬৮০ টাকা নির্ধারণ হলেও পায়রাবন্দ সরকারি কলেজে অতিরিক্ত আবর্তক ফি ১০০০ টাকা,মিলাদ ও মসজিদ ফি ১৫০ টাকা,বিদ্যুৎ ফি ৫০ টাকা ও অনলাইন ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের জন্য সর্বমোট ৪৬০০ টাকা ও বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ৫০৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য কষ্টসাধ্য।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরপরই নতুন করে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয় কলেজ প্রশাসন।নতুন নোটিশে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বোর্ড ফি ৩২৫০ এর স্থলে ২২৬০ টাকা করা হয় ও বিজ্ঞান বিভাগে ৩৬৮০ টাকার স্থলে ২৮২০ টাকা করা হয়।অন্যদিকে আবর্তক ফি,মিলাদ ও মসজিদ ফি,বিদ্যুৎ ফি,অনলাইন ফি একই রেখে নতুন করে ব্যবস্থাপনা ফি ৫০০ টাকা যুক্ত করা হয়েছে।শিক্ষার্থীদের বোর্ডের নিয়মিত ফি সংশোধন করে নতুন করে ব্যবস্থাপনার ফি’র নামে ৫০০ টাকা নতুন নোটিশে যুক্ত করায় শিক্ষার্থীদের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।শিক্ষার্থীরা বলছে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ খোলস পাল্টে কৌশলে বোর্ড ফি নোটিশে সংশোধন করে নতুনভাবে ব্যবস্থাপনা ফি ৫০০ টাকা চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক।একইভাবে কলেজের ভিতরে কোন মসজিদ না থাকার পরও মিলাদ ও মসজিদ ফি’র নামে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছে।অন্যদিকে মাস্টাররোলের কর্মচারীর নামে আবর্তক ফি নেয়ার পরও মাস্টারোলে নিয়োগকৃত কম্পিউটার অপারেটরের জন্য অনলাইন ফি’র নামে অতিরিক্ত ২০০ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত ফি’র বোঝা নতুন করে চাপিয়ে দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।

পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুয়াল বাকের জানান,আমরা কোন অতিরিক্ত ফি নিচ্ছি নাহ।মাস্টাররোলের ২ জন কর্মচারী আমাদের কলেজে রয়েছে।যাদের বেতন ভাতাদি কলেজের ফান্ড থেকে দেয়া হয়।এর জন্য আবর্তক ফি ১০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে ও অনলাইনে সব কাজ করতে হয় জন্য ২০০ টাকা অনলাইন ফি নেয়া হচ্ছে।মানবিক ও বাণিজ্যে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ১১৩০ টাকা ও বিজ্ঞান বিভাগে ১০০০ টাকা বোর্ড ফি’র নামে অতিরিক্ত নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এটি সংশোধন করে নোটিশ করা হয়েছে।আপনি বোর্ড ফি’র বিষয়ে নতুন নোটিশ দেখুন।

মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মমিন মন্ডল জানান,এবিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।আগামীকাল অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।