ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) হাওর বেষ্টিত এই আসনটি আওয়ামীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনের ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৫২হাজার ৫৪৭জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ১০৯জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৬জন এবং হিজরা দুইজন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেন ৫জন প্রার্থী। প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম (নৌকা প্রতিক), বিএনপির চেয়ারপারসনের বহিষ্কৃত উপদেষ্টা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ একে একরামুজ্জামান (কলার ছড়ি প্রতিক), জাতীয় পার্টির মুহাম্মদ শাহানুল করিম (লাঙ্গল প্রতিক), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোঃ ইসলাম উদ্দিন (মোমবাতি প্রতিক) ও ওয়ার্কার্স পার্টির মোহাম্মদ বকুল হোসেন-( হাতুড়ি প্রতিক)।

বর্তমানে নির্বাচনী এলাকায় বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও নির্বাচনী সভা করছেন। কাগজে-কলমে এই আসনে ৫ জন প্রার্থী থাকলেও ইতিমধ্যেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুহাম্মদ শাহানুল করিম ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ একে একরামুজ্জামানের কলার ছড়ি প্রতিকের সমর্থনে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোঃ ইসলাম উদ্দিন (মোমবাতি প্রতিক) ও ওয়ার্কার্স পার্টির মোহাম্মদ বকুল হোসেন- (হাতুড়ি প্রতিক) এর তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই।

নির্বাচনী মাঠে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ একে একরামুজ্জামান ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসনটি ১৯৯৬ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের দখলে। ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামীলীগের বিপর্যয়ের সময়ও বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। অ্যাডভোটে ছায়েদুল হক ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ৪ বারসহ মোট ৫ বার এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেলন। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক মৃত্যুবরণ করলে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হন।পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের তৎকালীন উপদেষ্টা সৈয়দ একে একরামুজ্জানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আবার মুখোমুখী হয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম এবং হেভিওয়েট প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একে একরামুজ্জান।

এবারের নির্বাচনী মাঠে বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম অনেকটা চাপে আছেন। দলীয় অনেক নেতা-কর্মীই তার পক্ষে নেই। আওয়ামী লীগের এই বিভক্তির কারণে নির্বাচনী মাঠে সুবিধা পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ একে একরামুজ্জামান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত তিন নেতা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের অর্থ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজির মিয়া, তার স্ত্রী ও নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রোমা আক্তার এবং নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ একে একরামুজ্জামানের কলার ছড়ির পক্ষে মাঠে কাজ করছেন।

এছাড়াও নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানো জাতীয় পার্টির নেতা মুহাম্মদ শাহানুল করিমও কলার ছড়ির পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। এদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম স্থানীয় এক সাংবাদিককে ও একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়ায় নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে গত ২৪ ডিসেম্বর সংগ্রামকে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি তাকে শোকজ করে। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর তিনি স্বশরীরে অনুসন্ধান কমিটির কাছে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন। সব মিলিয়ে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম অনেকটা বেকায়দায় আছেন। এবারের নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হওয়ার আশাঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষকলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নাজির মিয়া বলেন, বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম ক্ষমতায় থেকে দলের নেতা-কর্মীদের উপর অনেক অত্যাচার, অবিচার করেছেন এজন্য তারা নাসিরনগরবাসীকে নিরাপদে রাখতে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দোজা মোঃ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম বলেন, তিনি নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব সৈয়দ একে একরামুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগন পরিবর্তন চায়, এক ব্যক্তির কারাগার থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, আগে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় আমার সাথে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আছে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত তিন প্রার্থী আমার জন্য কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহানুল করিমও আমাকে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। বর্তমান পরিবেশ যদি বজায় থাকে তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

বার্তাবাজার/এম আই