রংপুরের পীরগঞ্জের পুত্রবধূ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণে নতুন রূপে সেজেছে পীরগঞ্জ। মঙ্গলবার শ্বশুরবাড়ি আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার আগমনকে ঘিরে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো পীরগঞ্জ। প্রশাসনিক পর্যায়েও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রংপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী সভা। সকালে তারাগঞ্জ কলেজমাঠ ও দুপুরে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সভা করবেন রংপুরের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা। এ নিয়ে নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কয়েক লাখ মানুষ সভাস্থল, রাস্তাসহ পাশের ফাঁকা স্থানে অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

চলতি বছরের ৮ আগস্ট রংপুরে জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি রংপুরের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ বছরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো রংপুরে এসে নির্বাচনী সভা করবেন। এ নিয়ে দুটি সভাস্থলে গড়ে তোলা হয়েছে নৌকার আদলে মঞ্চ। বাঁশ দিয়ে শক্ত বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে মঞ্চের চারদিকে। সভাস্থল ও আশপাশ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কর্মসূচি সফল করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল পরিদর্শনসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিমানে করে ১০টা ৫০ মিনিটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসবেন। সড়কপথে এসে তিনি বেলা সোয়া ১১টায় তারাগঞ্জে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনী সভায় অংশ নেবেন। এরপর সড়কপথে নিজ শ্বশুরালয় পীরগঞ্জের ফতেপুর জয়সদনে আসবেন। সেখানে স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করবেন।

শ্বশুরবাড়িতে দুপুরের খাবার খাবেন তিনি। সেখানে কিছু সময় বিশ্রামসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দুপুরেই তিনি পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী সভায় যোগ দেবেন। সেখানে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপির পক্ষে ভোট চাইবেন। জনসভাস্থলে ব্যাপক লোকসমাগম উপস্থিত করার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। এদিকে পুত্রবধূ শেখ হাসিনা শ্বশুরালয়ে আসছেন এ নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, পীরগঞ্জের মানুষ পুত্রবধূকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

তারাগঞ্জের ইকরচালী গ্রামের আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হামার প্রধানমন্ত্রী শেখের বেটি এলাকাত আসতোছে। এর আগে শহরোত আসছিল, সেটে যাবার পারো নাই। সেই জন্তে সকালে হামরা কোনো কামকাজ থুই নাই। সবায় মিলি জনসভায় যায়া শেখের বেটিক দেখমো।

তারাগঞ্জ উপজেলা শহরের লিপি বেগম বলেন, বাড়ির সামনোত মিটিং হইবে। এলাকার নেতারা হামাক যাবার কইছে। শেখ হাসিনাক তো খালি টিভিত দেখি, এইবার সামনা-সামনি দেখবার পামো। এমপি ইলেকশনের জন্তে নাকি ওমরা ভোট চাবার আসতোছে। হামরা তারাগঞ্জোত কারখানা চামো।

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, নৌকার আদলে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। সমাবেশে একশটির বেশি মাইক থাকছে। দুটি স্থানে মেডিকেল টিম থাকবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরগঞ্জ পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন পর শ্বশুরবাড়ি আসছেন। এ সুসংবাদ জানার পর থেকেই পীরগঞ্জবাসী তাকে বরণ করে নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত সময়ে পীরগঞ্জবাসীকে যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা সবটুকু পূরণ করেছেন। এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা পীরগঞ্জকে স্মার্ট ও মডেল উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা।তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত হবেন। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। নির্বাচন জনসভায় পীরগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলা থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ২৬ ডিসেম্বর রংপুরবাসীর জন্য উৎসব ও আনন্দের দিন হবে। ইতঃপূর্বে প্রধানমন্ত্রী রংপুরে যখন এসেছিলেন, তখন জনসভাস্থলের আশপাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আমরা তেমনই লোকসমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারাগঞ্জের পথসভা বিশাল জনসভায় রূপ নেবে। পীরগঞ্জে হবে ঐতিহাসিক জনসভা। প্রোগ্রাম শিডিউল পাওয়ার পর থেকে আমরা স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বর্ধিত সভা, বিশেষ সভা করে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই