বগুড়ায় গ্রাম পর্যায়ে শুরু হয়েছে আমন ধান ঘরে তোলার মৌসুম। পাকা ধানের গন্ধে কৃষকদের মনে এখন বেশ প্রফুল্লতা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় আগাম আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠ থেকে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

এদিকে মাঠ থেকে নতুন ধান বাড়িতে তোলার জন্য আঙ্গিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন কৃষাণীরা। পাশাপাশি এসব জমিতে শীতের সবজি চাষ করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা।

ভালো ফলন হওয়ায় বগুড়ার কৃষকরা মনে করছেন মণ প্রতি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত ধান বিক্রি করতে পারবেন। চলতি বছর প্রতি বিঘায় ১৫/১৬ মণ করে ধানের ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা ।

আগাম জাতের ধান কেটে এসব জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে চাষ করা হবে শীতকালীন বিভিন্ন ফসল।

সরেজমিনে দেখা যায়, শাজাহানপুর উপজেলার পানিহালী গ্রামের কৃষক আমিনুর বলেন, প্রতি বিঘা ৮ হাজার টাকা দিয়ে জমি পত্তন নিয়েছি। ৫ বিঘা জমির ধান ঘরে তুলেছি । বাজার অনুযায়ী বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ১৫ মন। সার, বীজ কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে খরচ হয় প্রতি বিঘা ১৭ হাজার টাকা। দাম ভালো পেলে অনেকটাই লাভবান হতে পারবো।

তার মতে সেই হিসেবে ধান চাষে তেমন লাভ থাকবে না । বিঘা প্রতি খড় বিক্রি হয় ২ হাজার টাকায়।

কাহালুর কৃষি শ্রমিক খোরশেদ আলম জানান, তিনি প্রতিদিন নিজ গ্রাম থেকেই ৮০০ টাকা মজুরিতে ধান কাটা শ্রমিকের কাজ করছেন। তিনি নিজেও একজন প্রান্তিক বর্গাচাষি। ফলে সব মিলিয়ে ভালোই আয় করছেন। তার এই ধান কাটা মাড়াইয়ের মৌসুমে তিনি ৩০ হাজার টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন।

নন্দীগ্রাম বিজরুল গ্রামের ধান চাষী তাইজুল ইসলাম বলেন,২ বিঘা জমির ধান কেটে নিয়েছে।প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ধান ১৪ মনের বেশি হবে না। বাজারে এখন ধানের দাম প্রতি মণ ১২০০ টাকা খরচ অনুযায়ী খুব বেশি লাভ হবে না।

দুপচাঁচিয়া কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন,আজ থেকেই ধান কেটে নেওয়া শুরু করেছি। বিঘা প্রতি ১৮ মণ ধান হতে পারে। যদি ১৮ মন করে ধান হয়, প্রতি বিঘা থেকে ৮ -৯ হাজার টাকা লাভবান হতে পারব। তবে আমার নিজের জমি এই কারণেই লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মানুষের কাছ থেকে জমি পত্তন নিয়ে ধান চাষ করে লাভবান হওয়া এখন খুব কঠিন।

বগুড়া জেলা কৃষি বিভাগ বলেন, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এবার ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে আমনের। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন।

গেল বছর আমনের উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে পশ্চিম বগুড়ার নন্দীগ্রাম, কাহালু, দুপচাঁচিয়া এবং বগুড়া সদরের কিছু অংশে আমন ধানের কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ ভাগ জমির আমন ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।

তবে অনেকাংশে বলেছেন ধান উৎপাদনের যে খরচ সেই তুলনায় লাভের আশা দেখতে হিমসিম খাচ্ছে প্রান্তিক কৃষক।

বার্তা বাজার/জে আই