মানব দরদী মানুষদের চিন্তা-চেতনা হলো শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকাই বেঁচে থাকা নয়। অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছে দিয়ে বেঁচে থাকার নামই জীবন। নিজের উপার্জিত অর্থের প্রায় ৭৫ ভাগই মানবতার সেবায় বিলিয়ে দেন। অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছে দিতে নিজের সাধ্যমতো আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন, অস্বচ্ছ মানুষের কল্যাণে। বলছি মানবতার সেবার কাজ করা কেরানীগঞ্জের আয়নাল হোসেনের কথা। যিনি মানব কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করেছেন, নামাজ ঘর মানবতার সেবা নামে একটি মাদ্রাসা।

সরেজমিনে তার বাসায় প্রবেশ করতেই দেখা মেলে, থরে থরে সাজানো রয়েছে একের পর এক পেকেট। যেখানে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেয়াজ, আটা, চিনি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় ৯ ধরনের আইটেম। দুই হাজার অসহায় দুস্ত পরিবারের মাঝে এসব ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেন, কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকার আয়নাল হোসেন। যিনি অস্বচ্ছ ও অসহায় দরিদ্র মানুষের কাছে, মানবতার ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত।

তার প্রতিষ্ঠিত নামজা ঘর মানবতার সেবা মাদ্রাসায় রয়েছে, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও নামাজ ঘরের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য তালিমের ব্যবস্থা। পুরো রমজান মাস জুড়ে এখানে যারা নামাজ পড়েন, তাদেরকে ইফতারের পাশাপাশি জায়নামাজ, তজবি ও নগদ অর্থ সহায়তাসহ ঈদের বাজার দেয়া হয়। এছাড়াও মাসিক ও বাৎসরিক কার্ডের মাধ্যমে এলাকার কয়েক হাজার অসহায় অস্বচ্ছল মানুষ পাচ্ছেন তার সাহায্য।

বয়সের ভারে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি নেই, অনেক আবার চোখেও দেখেন না। স্বামী নেই অথবা সন্তানরা বরনপোষন দিচ্ছে না। এমন অসহায় হাজারো মানুষের একমাত্র ভরসা আশ্রয়স্থল আয়নাল হোসেন। তার কাছ থেকে কেউ খালি হাতে ফেরেন না। নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করেন মানুষের পাশে থাকার।

ঠিক মতো চোখে দেখেন ৭৬ বছর বয়সী আম্বিয়া বেগম। স্বামী নেই, সন্তানরাও ভরনপোষণ দেয় না। তার একমাত্র ভরসা আয়নাল হোসেন। তিনি জানান, আয়নাল হোসেন দেয় বলেই আমরা বেচে আছি। আয়নাল অনেক ভালো মানুষ। আমি প্রতিদিন নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করি।

গোলাপি বেগম নামে আরেকজন জানান, যেভাবে আয়নাল আমাদের পাশে আছে, প্রতিটি এলাকার মানুষ যদি গরিবের পাশে থাকতো, তাহলে অসহায় গরিবরা না খেয়ে থাকতো না। আয়নালার কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফেরে না। কারো বিয়ে সাদি আটকে থাকলে সে সহযোগীতা করে। কারো থাকার যায়গা না থাকলে তার আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা দেয়। সবাইকেই সে খুশী রাখতে চেষ্টা করে। সে আমাদের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা।

আয়নাল হোসেনের সহায়তার ত্রাণ ভান্ডার থেকে অস্বচ্ছ অনেকে সাহায্য পেয়ে আবেগে উৎফুল্ল। মানুষের প্রতি আয়নালের এমন ভালোবাসার কারণে, তিনি সকলের কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা। আর তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে তার দির্ঘায়ু কামনা করে প্রার্থনা করেন সবাই।

আয়নাল হোসেন জানান, শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকাই বেঁচে থাকা নয়। অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছে দিয়ে বেঁচে থাকার নামই জীবন। আমার নিজস্ব উপার্জিত অর্থের প্রায় ৭৫ ভাগই মানবতার সেবায় বিলিয়ে দিচ্ছি। অসহায় মানুষের চোখের পানি মুছে দিতে নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বামী নেই, অথবা ছেলে সন্তানরা ভরণপোষণ দিচ্ছে না এমন পাঁচ শ’র বেশী বৃদ্ধাদের বয়স্ক কার্ড করে দিয়েছি। বছরে তিন থেকে চার বার তারা সেই কার্ডের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে।

এছাড়া আরো এক হাজার অস্বচ্ছ অসহায় মানুষকেও কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। ছিন্নমূল মুল মানুষের জন্য এতিম খানা ও বৃদ্ধাআশ্রম করেছি। মহিলাদের নামজ পড়ার পাশাপাশি তালিমের ব্যবস্থাও রেখেছি। আমার ছয় তলা পুরো ভবনটাই মানবতায় সেবার জন্য প্রস্তুত করেছি। আমি দীর্ঘ এক যুগ ধরে মানব সেবা করে আসছি। মহান রাব্বুল আলামিন যতদিন মানুষের সেবা করার তৌফিক দিবেন। ততদিনই মানব সেবা করে যাবো।

এসময় তিনি আরও জানান, অনেকের সামর্থ্য থাকার পরও গরিব দুঃখী মানুষের পাশে থাকানে না। অনেকে আবার, লোক দেখানোর জন্য দান করেন। অনেকে আবার গরিবের হক মেরে খাচ্ছে। তাছাড়া ত্রাণ সহায়তা বা অর্থ সহায়তা যাদের পাওয়ার কথা তারা সঠিক ভাবে পাচ্ছে না। অনেকে তেলা মাথায় তেল ঢালে। গরিবের ত্রাণসহায়তা বিতরণের যায়িত্বে যারা নিয়োজিত রয়েছেন তারা সবাই সবার অবস্থান থেকে গরিবকে তার প্রাপ্য হক বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।

মানুষের প্রতি ভালোবাসার প্রতিদান থেকেই যুগেরপর যুগ এভাবেই মানব সেবায় মানুষের পাশে থাকতে চান আয়নাল হোসেন।

বার্তা বাজার/জে আই