বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণে ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে চলতি মৌসুমের উঠতি ফসল ৭৫০ হেক্টর ক্ষেতের আমন ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেইসঙ্গে শীতকালিন আগাম সবজি ৬৯ হেক্টর, ২৭ হেক্টর মাসকালাই ও ২১ হেক্টর মরিচ ক্ষেতও সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া পানিতে ভেসে গেছে ২৩২টি জলাশয়। এসব জলাশয়ের আয়তন ৫শ’ ৯৩ বিঘা। সবমিলিয়ে কৃষি ও মৎস্য খাতে মোট সাড়ে ১৬ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস ও মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে উপজেলার দশটি ইউনিয়নেই কমবেশি আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় তৈরী হয় জলাবদ্ধতা। ফলে কৃষকের চোখের সামনেই তাদের স্বপ্ন আধা পাকা ও কাঁচা ধান পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতি হয় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি রকমারি সবজি ক্ষেতেও পানি জমে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রেকর্ড বৃষ্টিতে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নে ৬টি, ভবানীপুর ইউনিয়নে ২০টি, সুঘাট ইউনিয়নে ৮টি, কুসুম্বী ইউনিয়নে ৫০টি, খানপুর ইউনিয়নে ৮টি, খামারকান্দি ইউনিয়নে ৩০টি, মির্জাপুর ইউনিয়নে ১০টি, সীমাবাড়ী ইউনিয়নে ২০টি, বিশালপুর ইউনিয়নে ৪০টি ও গাড়ীদহ ইউনিয়নে ৪০টি জলাশয় ভেসে যাওয়ায় ৬ কোটি ১৫লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়।

১৪ অক্টোবর শনিবার সরেজমিনে গেলে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শৈল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, তাদের ফসলি মাঠে সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়। তাই অনেকটা আগেভাগেই নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলেন। কিন্তু তিনদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে পাকা ও আধা পাকা ধান ক্ষেত সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে যায়। এমন পরিস্থিতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। একই চিত্র উপজেলার সাধুবাড়ী, মামুরশাহী, খামারকান্দি, গাড়ীদহ ও বিশালপুর এলাকার ফসলি মাঠে। এদিকে প্রবল বর্ষণে জলাশয় ভেসে যাওয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছ চাষীরা। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষী আকরাম হোসাইন বলেন, তিনি ৬ টি জলাশয়ে রকমারি মাছ চাষ করেন। এর মধ্যে তিনটি জলাশয় আংশিক আর তিনটি জলাশয় সম্পূর্ণ ডুবে যায়। এতে অনুমান ২৫-৩০ লাখ টাকার মতো মাছ পানিতে ভেসে গেছে। একইভাবে মৎস্যচাষি আব্দুল গফুর, লিটন মিয়া, আব্দুর রাজ্জাক, আফছার আলীর শত বিঘা জলাশয় পানিতে ডুবে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে ।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, অতি বৃষ্টিতে ২৩২ টি জলাশয় ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মাছ ভেসে যাওয়ায় চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার দপ্তরে মাঠ পর্যায়ের জনবল কম থাকায় প্রকৃত সংখ্যা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন চাষির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৫শ’ ৯৩ বিঘা জলাশয় ডুবে ৬ কোটি ১৫ লাখ ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রবল বর্ষণে চলতি মৌসুমের আমন ও সবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যা নির্ধারণে তার দপ্তরের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। তবে প্রায় দশ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

বার্তাবাজার/এম আই