অগ্নিকান্ডে সারা ভিটায় শুধু এখন ছাই সর্বনাশা আগুন পুড়ে গেল সব। বাড়িঘরের শেষ চিহ্নটুকু পর্যন্ত নেই। যেখানটায় ঘরগুলি ছিল তার ভিটের ওপর শুধু ছাই। এক কোনায় পড়ে আছে আধাপোড়া চালসহ গৃহস্থালীর নানান কিছু। সাথেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে রয়েছে দশ,বিশ,একশ,পাঁচশ ও হাজার টাকার বেশ কিছু ঝলসানো নোট। আর বাকীগুলো পুড়ে ছাই। পাশাপাশি নিজ বসত বাড়িতেই একটি গোয়াল ঘরে চারভাই মিলে লালন-পালন করতেন দেশী বিদেশী জাতের ২০ টি গরু।

তার মধ্যে গতকারের আগুনে ৮ টি গরু পুরে মারা যায়। আর ১২ টি গরুর শরীরের বেশী অংশই আগুনে জলসে গেছে। এমনি অবস্থায় নিজেদের পোড়া ঘরের মধ্যে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন চার ভাই সালাম(৫৪),শহীদ(৫৫),হেলাল(৪৮)ও গিয়াস উদ্দিন সহ (৬৫) ও তাঁদের পরিবার। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সর্বনাশা আগুনে পুড়ে গেছে তাঁদের সকল স্বপ্ন আশা।

এখন কোথায় যাবেন, কি করবেন এমনকি আজ যে তারা কি খাবেন তারও কোন ঠিক নেই।

খবর পেয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর নওপাড়া গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। গত বৃহস্পতিবার রাতে আগুনে পুড়ে গেছে চার ভাইয়ের বসতঘর ছাড়াও এক সাথে লালন-পালন করা ২০টি গরুর মধ্যে ৮টি বিভিন্ন জাতের গরু। বাকী গুলির অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

হেলাল মিয়া জানান,সরাদিন কাজকর্ম করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সকলেই ঘুমিয়ে পরি। হঠাৎ রাত ১২ টার দিকে পোড়া গন্ধ পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায় পাশের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের ঘরের এক পাশে আগুন জ্বলছে এবং তা মহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বাকী ঘরগুলিতে। তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে এলে ততক্ষনে আগুনে চারটি বসত ঘর পুড়ে যায়। সেই সাথে পাশেই একটি গোয়াল ঘরে ছিল চার ভাইয়ের যৌথ উদ্যোগে লালন পালন করা ২০টি গরু। সকলেই গরুগুলির উপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় গোয়াল ঘরে আগুন লেগে গেলে আগুন নিভানোর আগেই সকল গরুই দ্বগ্ধ হয়।

এরমধ্যে ৮টি গরু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাকীগুলির অবস্থাও ভালো না । ক্ষতিগ্রস্থ আরেক ভাই মো.শহীদ মিয়া জানান,ধারদেনা করে পুজি নিয়ে গরু কিনে তা লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করেন। আর তা লভ্যাংশ ভাইয়েরা ভাগ করে নেন। এভাবেই চলছে গত প্রায় দশ বছর ধরে। বিদেশী জাতের গরু ছাড়া রয়েছে দেশী জাতের। একটি গরুর সর্বোচ্চ মূল্য রয়েছে প্রায় ৩লাখ টাকা। তার মধ্যে দুদ্ধ গাভীও ছিল যা থেকে দুধ বিক্রি করা হতো। এখন সকল কিছু হারিয়ে নিঃস্ব প্রায়।

তিনি আর বলেন,গত বুধবার একটি গরু বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকায়। সেই টাকা তাঁর কাছেই রক্ষিত ছিল। আর কিছু লাগিয়ে আরেকটি গরু কিনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নগদ টাকাগুলিও পুড়ে গেছে। জানা যায়,চার ভাইয়ের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০জন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে।

ক্ষতিগ্রস্থ সালামের স্ত্রী ফরিদা বেগম(৪০) জানান,গত প্রায় ২০ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো তাঁর সব সঞ্চয় আর গৃহস্থালী পণ্য এক রাতের আগুনে মাত্র আধা ঘন্টায় পুড়ে গেছে। এই বলে কান্নায় ভেঙে পরেন। তিনি আরও বলেন চোখের সামনে সব শেষ অইতাছে কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছি না। খালি নিজের জান ও পোলাপাইনডি লইয়া বাইর অইছি।

জানা যায়,বৈদ্যুতিক মিটার থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সেখানে গেলেও ততক্ষনে সকল কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাচানো গেল না কিছুই।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা হাফিজা জেসমিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তা বাজার/জে আই