বান্দরবানের লামায় রুপসীপাড়া ইউপির উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত-প্রধান শিক্ষক কাজী আলাউদ্দিন ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি একই ইউপির চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মার বিরুদ্ধে। অনৈতিক নিয়োগ ও অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ এনে বিদ্যালয় কমিটির সদস্য মো. শাখাওয়াতুল ইসলাম বুধবার ২৩ আগস্ট’২৩ বিকেলে উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহ জেলা উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অজান্তে ও সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভারপ্রাপ্ত-প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুজনই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখেই নিজেদের পছন্দের লোককে মোটা অংকের বিনিময়ে নিয়োগের কার্যক্রম সমাপ্ত করেন, যা নিয়মবহির্ভূত। তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত এবং যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির শাস্তি দাবি করেন।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সদ্য নিয়োগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত-প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজসে ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এবিষয়ে অন্যকোন সদস্য এমনকি শিক্ষক প্রতিনিধিও অবগত নয়। গোপনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তথ্য গোপন রেখে নিজেদের ঘরের ও পছন্দের প্রার্থীর নিয়োগকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে সভাপতিগণ।

বৃহস্পতিবার ২৪ আগস্ট’২৩ সরেজমিন পরিদর্শনে উঠে আসে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত মো. মাহবুব আলম ও মহসিন আলী থেকে সম্প্রতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়োজনানুসারে পত্রপাঠে সিগনেচার করা ছাড়া কিছুই জানেননা তারা। তবে পুরাতন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ম্যানেজিং কমিটিতে নতুন শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নেপথ্যে সুবিধাভোগের কলাকৌশল নিহিত বলে জানান উপস্থিত শিক্ষক কর্মচারী ও অন্যান্য সদস্যগণ।

একইসাথে প্রধান শিক্ষক সহ বিদ্যালয়ে মোট নিয়োগপ্রাপ্ত  ৮জন শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও দপ্তরী সহ মাত্র ৩জন শিক্ষককে ক্লাস মনিটরিং করতে দেখা গেছে। ভারপ্রাপ্ত-প্রধান শিক্ষক সহ বাকিদের অনুপস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে ছুটিতে ছিলেন বলে জানায় তারা। তবে একই দিনে পাঁচ জন শিক্ষক ছুটিতে থাকা প্রসঙ্গে পড়ালেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল।

এদিকে প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম অসুস্থ জনিত কারণে ০১ ফেব্রুয়ারি’২৩ থেকে তিন মাসের ছুটিতে আছেন। তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি সুস্থ হয়ে দায়িত্বে ফিরতে চাইলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছাচিং প্রু মার্মা বলেন, আপনার বেতনতো ঠিকঠাক চলছে। আরো কিছুদিন বিশ্রাম নেন। তবে একই ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত-প্রধান শিক্ষক থেকে লাখ টাকার বাণিজ্য মূলে অনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষককে ছুটিতে থাকতে বাধ্য করেছেন সভাপতি।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আলাউদ্দিন বলেন, নিয়োগের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সবাই অবগত। তবে এখন কেন অস্বীকার করছেন জানিনা। জানতে চাইলে  নিয়োগ কমিটির সদস্য ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুস সত্তার গাজী জানান, নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা এবং আমাকে নিয়োগ কমিটিতে রাখা হয়েছে কিনা তাও জানিনা। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাকে কাগজ একটাতে স্বাক্ষর দিতে বললে আমি দিয়ে দি।

নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছাচিং প্রু মার্মা বলেন,  নিয়মমাফিক নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেউ যদি অভিযোগ করলে ডিপার্টমেন্ট দেখবে, বাকি আপনারা তো সমাধান করতে পারবেন না জাস্ট লিখতে পারেন। প্রধান শিক্ষককে ছুটি পরবর্তী জয়েন হতে না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, এটা কমিটির ব্যাপার রেজুলেশন এর বাইরে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না।

এবিষয়ে বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, অনৈতিক ও অবৈধভাবে কোন নিয়োগ এবং প্রার্থী হয়রানী হোক সেটা আমরা চাইনা। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/জে আই