আন্তর্জাতিক খ্যাত ও আমের রাজধানী এবং এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার ঐতিহাসিক চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট। এই আমের রাজধানী এখন যানজটের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ মহাসড়কে তীব্র যানজটে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সাধারণ পথচারীগণ। এই যানজট নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় এবং ভোগান্তিতে পথচারিরা। যানজট নিরসনের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি।

আম আড়ৎদার সমিতির অভিযোগ যানজটের মুল কারণ এবং এই যানজটের জন্য দায়ী হচ্ছে আম হাট-বাজার ইজারা কমিটি। অন্যদিকে কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও যানজট নিরসনের দায় এড়াতে পারবেন না বলেও আম আড়ৎদার সমিতির অভিযোগ।

যানজটে শতশত পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রশাসন নীরব থাকায় যানজট অসহনীয় রূপ নিয়েছে কানসাটের এই যানজট। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে,মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যানজট কমানো হয়েছে।

জানা গেছে, যানজটের কারণে আম ব্যবসায়ী, আমচাষি, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বিভিন্ন যানবাহন ও যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন। বিঘ্নতা ঘটছে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে। সরেজমিনে কানসাট বাজারে ঘুরে যানজটের এমন চিত্র দেখা গেছে।

দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ মহাসড়কের কানসাট বাজার এলাকা থেকে ধোপপুকুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক, যাত্রীসহ শত শত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, রিকশা, ভ্যান যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে। শুধু সেখানেই নয়, কানসাটে সেতু এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকে নিমতলা হয়ে মূল বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার যানজটে আটকে পড়া যানবাহনের দীর্ঘ সারি। গোপালনগর মোড় থেকে পূর্বদিকে আব্বাস বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার একই দৃর্শ্য। গোপালনগর মোড় থেকে রাজার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় পথচারিদের পায়ে হেটেও যেতে পারছে না। কানসাট সেতু থেকে পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় শত শত যানবাহন যানজটের কবলে পড়ে আটকা ছিলো কয়েক ঘন্টা থেকে। সেখানে বিন্দু মাত্রায়ও নরচর করতে দেখা যায়নি।

যানজটের কারণে সময়মত পথচারীরা নিজস্ব গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। ফলে প্রচন্ড তাপদহে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাচ্ছেন। এই যানজটের কারণে রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া রোগীদেরকে সব চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে এবং কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। এই নিয়ে রোগীদের অভিভাবকদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও লক্ষ্য করা গেছে।

যানজটের আটকে পড়া আব্দুল করিম বলেন, প্রতিবছর এই যানজটের মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। গত বছর যানজট কম ছিলো। কিন্তু এই বছর আমের রাজধানী যেনো যানজটের রাজধানী হয়ে গেছে। রাস্তার উপরে প্রায় ২/৩ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে প্রতিদিন। খালি পায়ে তো হাটা যাই না, আর কিভাবে যানবহনে যাতায়াত করবো সেই চিন্তা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি পুতুলের মত। শুধু কি তাই? সাধারণ সুস্থ মানুষ পথের মাঝে অপেক্ষা করতে যে কষ্ট হয় তাতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কি হবে তা বলার ভাষা নাই আমাদের।

পথচারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর আম বোঝাই ভ্যান রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে বেচা-কেনা ও যত্রছত্র ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা দাঁড়ানো কারণেই এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যেনো কেউ দেখার নেই। যানজট নিরসের জন্য কোন মাথা ব্যাথা নাই মনে হচ্ছে হাট কমিটির লোকজনের।

এব্যাপারে কানসাট আম আাড়ৎদার সমবায় সমিতি লিঃ ওমর ফারুক টিপু অভিযোগ করে বলেন, যানজটের জন্য মুলত হাট-বাজার কমিটি দায়ী। কেমন, হাটের নির্ধারিত স্থানে বাজার না বসিয়ে রাস্তার দু’পাশে আম বোঝায় ভ্যান দাঁড়িয়ে আম কেনা বেচা করছেন অনেক। এটা পাঁকা আম ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বেশি দেখছি। গত বছরের তুলনায় এবছর যানজটটা বেশি হচ্ছে। যানজট নিরসনের জন্য হাট বাজার কমিটি কোন উদ্যোগ নিতে দেখছি না।

তিনি আরও বলেন,এর আগের বছর যানজট নিরসনের জন্য প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আনসার, স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছে। কিন্তু এবছর কেমন চোখে পড়েনি। আমরা চাই সাধারণ পথচারিরা যানজট মুক্ত সড়কে চলাফেরা করবেন। এর জন্য সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আশা করছি যানজট নিরসনের জন্য সকলে এক সাথে কাজ করবেন।

যানজট নিরসনের বিষয়ে হাট-বাজার কমিটির পরিচালক আসাদুজ্জামান ভোদন বলেন, যানজট নিরসনের জন্য ৩জন ট্রাফিক, ৫ জন আনসার ও ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছে। তবে, গত বছরের তুলনায় এবছর যানজট কম। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু পেরেছি যানজট নিরসন করছি। যানজট নিরসন করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।

কানসাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সেফাউল মুলক বলেন, হাট আম বাজার আমার ইউনিয়নে হলেও এর ইজারা দেন উপজেলা প্রশাসন। যানজট নিরসনের জন্য উপজেলা প্রশাসন চাইলে আমি সহযোগিতা করবো।

এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হায়াত জানান, যেটুকু যানজট লাগছে তা আম বাজারের জায়গা কম থাকার জন্য। তারপরও যানজটের নিরসনের জন্য উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ এবং আনসার বাহিনী কাজ করছে। হাট বাজার কমিটিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে, আগের থেকে তুলনামূলক যানজট কম।

বার্তাবাজার/এম আই