সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের মারপিটে রাজপ্রতাপ দাশ (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহতের বাবা কালিগঞ্জ উপজেলার হিজলা গ্রামের দীনবন্ধু দাশ বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজনকে আসামি করে সোমবার (১৭ জুলাই) সকালে কালিগঞ্জ থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম পাড়, সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মহিত, সহকারি শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও সহকারি শিক্ষক সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরী। মামলার অপর আসামি সহকারি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম পলাতক।

প্রসঙ্গত, নিহত স্কুল শিক্ষার্থী রাজপ্রতাপ দাশ (১৫) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের হিজলা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী দীনবন্ধু দাশের ছেলে। সে কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।

রোববার বেলা ৩ টার দিকে উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষকের মারপিটে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজপ্রতাপের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে দোষী শিক্ষকের বিচার দাবিতে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দিতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর স্কুলের শিক্ষকদের ব্যবহৃত ৮ টি মোটরবাইক ভাঙচুর ও দু’টি মোটরবাইক আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা।

প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, টিভি, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছের পাশাপাশি ভেঙ্গে ফেলা হয় স্কুলের কয়েকটি জানালার গ্লাস।

খবর পেয়ে কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর পরিস্থিতি কিছুটি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সন্ধ্যার দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম, সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খা ও মনিরুল ইসলামকে একটি মাইক্রোবাসে এবং অপর একটি মাইক্রোবাসে করে অবরুদ্ধ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারিদের পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস থেকে বের করে নিয়ে যায় পুলিশ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে স্কুলের এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটছিল ৫/৬ জন সহপাঠী। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলো নবম শ্রেণির ছাত্র রাজপ্রতাপ দাশ, মুশফিকুর রহমান, জোবায়ের ও আর রাফি। সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও মনিরুল ইসলাম বিষয়টি দেখতে পান। এ ঘটনায় রাজপ্রতাপ দাশসহ ৪ জনকে মারধর করে অবকাশ চন্দ্র খাঁ। পরে বিষয়টি জানানো হয় রাজপ্রতাপের পিতা নলতা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ও ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের হিজলা চন্ডিপুর গ্রামের দীনবন্ধু দাশকে। বিকেল তিনটার দিকে হঠাৎ বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা রাজপ্রতাপের লাশ নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে। শিক্ষক ও কর্মচারিরা এসময় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে শিক্ষক মিলনায়তনে আশ্রয় নেন। বিক্ষুব্ধরা শিক্ষক মিলনায়তনের তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়।

খবর পেয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুর রহমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

এদিকে নিহতের কাকীমা তাপসী দাশ (৪০) জানান, রাজপ্রতাপ বেলা ১২ টার দিকে বাড়িতে এসে জলপান করে বাথরুমে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে বমি করে। এ সময় সে বুকে ব্যথা করছে জানিয়ে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলে। সে অনুযায়ী রাজপ্রতাপকে নলতা হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার সময় পথে তার মৃত্যু হয়।
রাজপ্রতাপের বাড়িতে বর্তমানে চলছে শোকের মাতম।

বার্তাবাজার/এম আই