অভাবের সংসার বাবা ঢাকায় রিকশা চালান। বড় ছেলে জুয়েল মামুন (২৬) পড়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর (২২) পড়েন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ আর কুলিয়ে উঠা হচ্ছিল না বাবার। অপরদিকে স্ত্রী ও ছোট কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসারও চালাতে ও হিমশিম খাচ্ছে। বড় ছেলে মামুন চেষ্টা করেন টিউশনিসহ নানা কাজ করে পড়াশোনার খরচ মেটানোর। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন সময় আসে আমের মৌসুম। অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রির ধারণা তাঁদের জীবন বদলে দিয়েছে। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রতন বরিশ গ্রামে দরিদ্র একটি পরিবারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা দেখা দেয় জুয়েল মামুনের। এর কিছুদিন পর একটা স্কলারশিপ পায় সে। তখন থেকে আর কারো উপর নির্ভর করতে হয়নি জুয়েল মামুনকে। বছর চারেক আগের কথা। সেবার আমের মৌসুমে ছিল পবিত্র রমজান। বিশ্ববিদ্যায় ছুটি।

ফেসবুকে ‘ফ্রান্ট হাট’ নামে একটা পেজ খুলে দুই ভাই। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী সরাসরি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে শুরু হলো কুরিয়ারে পৌঁছে দেওয়া। প্রথম বছর প্রায় পাঁচ হাজার কেজি আম বিক্রি হয়েছিল।

পরের বছর নিয়ম করলেন, আগে টাকা পাঠিয়ে বুকিং দিতে হবে। সাড়া মিলল তাতেও। বিক্রি হলো প্রায় ১৫ হাজার কেজি আম। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার কেজি।

এবারও তাঁদের কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। মৌসুমের শুরুতেই চার হাজার কেজি গোপালভোগ পাঠিয়েছেন। রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের বাজারে দুই ভাই আরও পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে এ কর্মযজ্ঞ চালান।

কর্মীদের একজন শুধু আমের মান নিশ্চিত করেন। অন্যরা আম ওজন করা, প্যাকেট করা, কুরিয়ারে বা গাড়িতে পাঠানোর কাজ করেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠানো হয়।

জুয়েল মামুন বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও আমের ব্যবসা করে আমরা সংসারের হাল ধরতে পেরেছি।’ ব্যবসা থেকে আয় থেকে বাড়ির কাঁচা মেঝে পাকা করে ওপরে নতুন টিনের ছাউনি দিয়েছি। গরুর খামার রয়েছে। খামারে দুটি ষাঁড় ছিলো। এ ঈদে অনলাইনের মাধ্যমেই বিক্রি করে ফেলেছি।

জুয়েল এখন স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, আলমগীর চতুর্থ বর্ষে। গত কয়েক বছর ধরে তাঁদের বাবাকে আর রিকশা চালাতে হয় না। জয়ের একটি বিভিন্ন সরকারি চাকরির লিখিত পরিক্ষায় নির্বাচিত হয়ে আছেন। চাকরিটি হলে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসাটি পরিচালনা করবেন। আর সরকারি চাকরি না হলে প্রাইভেট চাকরির দিকে না ছুটে এ কাজকেই পেশা হিসেবে নিবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, প্রতি আমের সিজনে প্রায় ৩০-৩৫ টন আম বিক্রি করে থাকি এবং ১০/১১ জন শ্রমিকও এই ব্যবসায় আমাদের সাথে কাজ করেন। মামুনের ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে এম.কে.ডি.আর গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ লৎফর রহমান বলেন, মামুন দরিদ্র পরিবারে সন্তান। আমার পরিচিত মুখ। ছেলেটি খুবই উদ্যামী এবং কর্মঠ। সে পরিশ্রম করে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তার অসচ্ছল পিতামাতার পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে সংসারের যাবতীয় খরচও বহন করছে। এসময় ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের যে কোনো প্রয়োজনে সর্বদা মামুনের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

বার্তা বাজার/জে আই