কক্সবাজারের টেকনাফে হোয়াইক্যং মহেশখালীয়া পাড়া বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মুফিজ আহমদ ইকবালের অবহেলায় দুই দাখিল পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেওয়া হল না ৷ এছাড়াও এই সুপারের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির মাধ্যমে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের এর অভিযোগ তুলেছে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি। বিষয়টি গড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যন্ত।

ভূক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী উর্মিনা আক্তার ও হুমাইয়রা ইয়াছমিন জানায়, চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় আংশ গ্রহনের জন্য মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গেলো বছর ১২ নভেম্বর আমরা মাদ্রাসার সুপার মফিজ আহমদ ইকবালের কাছে বোর্ড ফি জমা দিয়। তিনি অবহেলা করে আমাদের ফরম পূরণ করতে বিলম্ব করেন। ফলে চলতি বছর অনুষ্টিত দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। এই বিষয়ে কথা বলতে বারবার মাদ্রাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তিতে ফোন করে এই বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে টাকা ফেরত দেবেন বলে জানায়। তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাদের ভবিষ্যত নষ্ট করেছেন। আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে অভিযোগ করেছি।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপারের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী জানান, অভিযোগ তদন্ত করে মন্ত্রনালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ পাওয়াগেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অপরদিকে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) অধিভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে সুপারের অনিয়ন নিয়ে কোন শিক্ষক মুখ খুলতেই ভয় পায়। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইতিপূর্বে একজন সিনিয়র শিক্ষককে অভিযুক্ত সুপার মুফিজ আহমেদ ইকবাল পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। এই ব্যাপারে গেলো বছর ১৬ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদ্রাসা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষক মুফিজুর রহমান৷

অপরদিকে, বিতর্কিত এই সুপারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ তুলে গত ৬ জানুয়ারী মাদ্রাসা হলরুমে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য ফয়েজ উদ্দিন জিকু লিখত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন- মাদ্রাসার সুপার দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে অবজ্ঞা প্রদর্শন করে আসছেন। বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাদ্রাসার তহবিল থেকে টাকা তছরুপ করে আসছে। শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা, মাদ্রাসার অন্যান্য খাতের টাকা ব্যাংকে জমার নামে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও গত ২০২২ সালে অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত পরিচালনা কমিটিটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন না এনে নিজের ইচ্ছামত হিসাব নিকাশ দেখিয়ে সৈরাচারী ভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। বিষয়টি মাদ্রাসার সভাপতি টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল আলমকে জানালে তার হস্তক্ষেপে পরবর্তিতে কমিটি অনুমোদন পায়।

বক্তব্যে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মাদ্রাসায় দুই জন মহিলা শিক্ষিকা মোহাইমিনু নাহার এনি ও মাহমুদা সুপারের নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে বিগত ৮ মাস পূর্বে মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যান। এর পর তাদের সাথে কৌশলে সখ্যতা গড়েতুলে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে বেতনের টাকা তিন জনে মিলে ভাগ ভাটোয়ারা করেছে। শুধু মাদ্রাসার একটা নির্বাচিত কমিটিকে অবজ্ঞা করে অর্থ আত্মসাৎ নয়, মেরামতের নামে অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে মাদ্রাসার ল্যাব টেকনিশিয়ান রুমের যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলেছেন। এভাবে একেরপর এক অনিয়ম দুর্নীতি, জালিয়তি সহ নানা অপকর্ম করে গেলেও তার বিরুদ্ধে আইনী কোন পদক্ষেপ না থাকায় তার অপকর্ম থামানো যাচ্ছেনা। আমরা এই সুপারের অপসারন চাই।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এডহক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ইসমাঈল, অভিভাবক সদস্য আবুল হাশেম, নুরুন নবী আরমান প্রমূখ সহ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগন উপস্থিত ছিলেন।