পাবনা সদরের দোগাছিতে ভুল চিকিৎসায় হাসমত আলী শেখ (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। পরপর ৪ টি ইনজেকশন পুশ করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে স্বজনদের অভিযোগ। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারকে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে সকাল ৯ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত হাসমত দোগাছি ইউনিয়নের দোগাছি মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আবুল মজিদ প্রামানিকের ছেলে। তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী ছিলেন। অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক দোগাছির চিথুলিয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে আতিকুজ্জামান ওরফে সুমন মহুরি।

জানা গেছে, গত ৩ দিন ধরে বুকে জ্বালাপোড়া ও যন্ত্রনায় ভুগছিলেন হাসমত। গতকাল রাতে দুইটা গ্যাসের ট্যাবলেট দিলে খাওয়ার পরেও বুকে ব্যাথা ও যন্ত্রণা ঠিক হয়না। আজকে সকালে বুকের ব্যাথা ও যন্ত্রণা বেশি হলে এই পল্লী চিকিৎসক সুমনকে নিহতের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি গিয়ে পরপর ৪ টি ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এদিকে মৃত্যর পরপরই অভিযুক্ত চিকিৎসকের ফার্মেসীর দোকান ভাঙচুর করে ও ওষুধ পুড়িয়ে দেয় স্থানীয়রা। এলাকায় থমধমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহতের চাচা মো: ইসরাইল বলেন, সুমন নামের পল্লী চিকিৎসক হাসমতকে ইনজেকশন পুশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মারা যান। আমাদের মনে বুৃঝ দেওয়ার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দোগাছী বাজার পার হতেই মৃত লাশ আবার বাড়িতে নিয়ে আসছি। কোন প্রকার অনুমতি না থাকলেও তিনি এলাকায় দোকানের মধ্যে চেম্বার বসিয়ে শতশত রুগী দেখেন। একটা রুগী গেলেই তাকে ইনজেকশন পুশ করার অভ্যাস আগে থেকেই। গ্রামের মানুষকে শুধু ইনজেকশন দেয়। এর আগেও তুলিয়া আক্তার ও মর্জিনা খাতুন নামের দুইজন নারীকে ভূল চিকিৎসা দিয়ে হত্যা করেছে। আগে বিচার হয়নি তাই এখনো অনিয়ম করেই যাচ্ছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

নিহতের স্ত্রীর ঈশিতা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী সুমন ডাক্তারের থেকে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো অসুস্থ হলে তার থেকেই চিকিৎসা নিয়ে থাকে। গত ৩ দিন ধরে বুকে ব্যাথা ও যন্ত্রণায় ভূগতেছিল। গতকাল রাতে তার থেকে গ্যাসের ট্যাবলেট নিয়ে খায়। সকালে অসুস্থ বেশি হলে ওই ডাক্তারকে আমার স্বামী ফোন করে ডাকে। স্বামীকে বারবার বলি যে পাবনায় যেতে হবে। সে এ কথা না শুনে ওই ডাক্তারকেই ঢাকে। এরপর সে আমার বাড়িতে এসে পরপর ৪ টি ইনজেকশন পুশ করে। এক মিনিটের মধ্যেই স্বামী আমার হাতের উপর মারা যায়। এই ঘটনায় আমি সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এ বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক আতিকুজ্জামান ওরফে সুমন মহুরি বলেন, হাসমত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা সব সময় একসঙ্গে চলাচল করেছি। সকালে তার বুকে ব্যাথা বেশি হলে আমি গিয়ে প্রথমে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছি। এরপর একটা সার্জেল গ্যাসের ইনজেকশন পুশ করি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। আসলে তার মৃত্যুর জন্য আমি কোনভাবেই দায়ি নই। অযথা আমার ফার্মেসীর দোকান ভাঙচুর করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ওষুধ পুড়িয়ে দিয়েছে।

এর আগে আপনার কাছে ভূল চিকিৎসায় আরও দুইজনের মৃত্যুর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব সম্পর্কে আমি জানি না।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ঘটনার পর আমরা নিহতের বাড়িতে গিয়েছিলাম। পরিবার ও এলাকাবাসীদের থেকে শুনেছি যে বুকে ব্যাথা ও যন্ত্রণা বেশি হলে নিহতের বন্ধু পল্লী চিকিৎসক সুমনের মোবাইলে ডেকে আনলে তিনি ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর সে মারা যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনগণ তার দোকানের সব ওষুধ পুড়িয়ে দেয়। পুলিশম রদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সঠিত তথ্য বলাও অসম্ভব। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাবনার সিভিল সার্জন শহিদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, এ বিষয়ে এখনো আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। পল্লী চিকিৎসকদের কোন অনুমতি থাকে না। সেজন্য ওইভাবে রোগীর রেজিস্ট্রারও থাকেনা। যদি কোন ক্লিনিক বা হাসপাতাল হতো তাহলে রেজিস্ট্রার থাকত। তখন আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত করতে পারতাম। যদি কেউ অভিযোগ দেও তাহলে খতিয়ে দেখা হবে।

বার্তা বাজার/জে আই