পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হলো কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপি মসজিদ বিতর্কের নতুন এক অধ্যায়। জ্ঞানবাপি মসজিদের বেজমেন্টে পূজার অনুমতি দেন উত্তর প্রদেশের বারানসি জেলা আদালতের জজ কৃষ্ণ মোহন পান্ডে। নিজ কর্মজীবনের শেষ দিনে এই অনুমতি দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন তিনি।

কয়েকদিন আগেই ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল যে হিন্দুদের একটি প্রাচীন মন্দির ভেঙ্গেই সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।এর আগে নিম্ন আদালতের নির্দেশে মসজিদ চত্বরে জরিপ চালিয়েছিল সংস্থাটি। জরিপে দেখা গেছে, হিন্দু মন্দিরের থামের ওপর মসজিদ তৈরি হয়েছে। সন্ধান পাওয়া গেছে ৩৪টি শিলালিপিরও। জ্ঞানবাপী মসজিদের গা লাগোয়া হিন্দুদের অতি পবিত্র তীর্থস্থান বলে পরিচিত ভগবান বিশ্বনাথ বা শিবের মন্দির। তাই জ্ঞানবাপী মসজিদের ভূগর্ভস্থ ওই কক্ষটিতে পূজা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

আদালতের কাছে তাদের পিটিশনে হিন্দুদের তরফে দাবি করা হয়, “পরিসরটির দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ কক্ষে মূর্তি পূজা হতো। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এক পূজারিকে ব্যারিকেড দেওয়া এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। এর ফলে ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে ‘রাগ’, ‘ভোগ’ ইত্যাদি আচার অনুষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়।” হিন্দুদের দাবি, রাজ্য সরকার আর জেলা প্রশাসন কোনও কারণ না দেখিয়েই ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে পূজার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারা এও দাবি করে যে পূজারি ব্যাসজীর নামাঙ্কিত ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষটির ভেতরে হিন্দুদের পূজা-অর্চনার বিভিন্ন সামগ্রী, প্রাচীন মূর্তি আর ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সামগ্রী রয়ে গেছে। হিন্দুদের দাবি মসজিদ চত্বরে পাওয়া গেছে একটি ‘শিবলিঙ্গের’ অস্তিত্ব। যেটির সঠিক জরিপ করার দাবিও জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে মুসলিমরা বলছে, হিন্দুরা যাকে ‘শিবলিঙ্গ’ বলছেন, সেটা আসলে মসজিদের অজুখানার একটি ফোয়ারা।

হিন্দুদের দাবি অনুযায়ী কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মূল গর্ভগৃহ ছিল বিশাল। মোগল আমলে সেই গর্ভগৃহে প্রাচীর তুলে কয়েকটি কক্ষ তৈরি হয়। তার ওপরেই তৈরি করা হয় জ্ঞানবাপি মসজিদ। তবে মুসলমানদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে কখনওই পূজা হত না। তাই কক্ষটিতে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পূজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দাবিটাও অবান্তর। ওই কক্ষে কোনও মূর্তি ছিল না বলেও মুসলমানদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালে সুপ্রিম রায়ের পর শুরু হয়েছিল রামমন্দির নির্মাণের কাজ। অথচ এর আগে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই স্থানেই দাঁড়িয়ে ছিল বাবরি মসজিদ। ১৫২৮ সালে একটি মন্দিরের উপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এমন দাবিতে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশের দাবি ছিল, এই মসজিদটি হিন্দুধর্মের অন্যতম দেবতা রামের জন্মভূমির ওপর নির্মিত। সেই সূত্র ধরে বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রথম আপত্তি উত্থাপিত হয় ১৭৫১ সালে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রামমন্দির। এই মসজিদ-মন্দির ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অস্ত্রও মনে করেন অনেকে। কেননা এর ফলাফল হিসেবেই ১৯৮৪ সালে লোকসভায় মাত্র দুটি আসন পাওয়া বিজেপি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩০৩টি আসন নিয়ে প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।

আদালত অনুমতি দেয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই পূজা শুরু হয় জ্ঞানবাপি মসজিদের বেজমেন্টে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মন্দিরে ‘রাগ-ভোগ’ নামক রীতিরও আয়োজন করতে হবে। তাই ঐতিহাসিক এই মসজিদের ভাগ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটি সময়ই বলে দিবে।

বার্তা বাজার/জে আই