একসময় রিকশা, নৌকা, ও মালবাহী ট্রাকে নায়ক নায়িকাসহ পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন ছবি এঁকে ব্যস্ত সময় পার করতেন যমুনার তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জের সন্তান বুলবুল (৫৫)। স্থানীয়ভাবে সে ‘আর্টিস্ট বুলবুল’ নামে পরিচিত। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির প্রভাবে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে আঁকানো ছবি ও লেখা। শহরের বাহিরগোলা গোধুলী সিনেমা হলের পাশে ছোট্ট একটি ভাড়া দোকানে কোনো রকম কাজ করে সংসারের চাহিদা পূরণ করছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বুলবুল। পরিবারে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে শহরের শহীদগঞ্জে বসবাস করেন তিনি।

বুলবুল বার্তা বাজারকে জানায়, দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১৯৯৩ সালে পরিবারের হাল ধরেন তিনি। ভালোলাগা থেকেই শহরের রতন আর্টসের কর্ণধর রতনের কাছে আর্ট শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একটা সময় প্রচুর কাজের চাহিদা থাকায় একা কাজ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। কাজের চাপ সামাল ও সঠিক সমায়ে কাজ ডেলিভারি দিতে একাধিক আর্টিস্ট দিয়েও কাজ করাতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে কাজের সেই জৌলুস আর নেই। দিনের পর দিন বেকার বসে থেকে সময় পার করতে হচ্ছে বুলবুলের মতো অনেক আর্টিস্টকে।

বুলবুল বলেন, আশি ও নব্বই দশকে আঁকা ছবির রিকশার বোর্ড বিক্রির ব্যবসা রমরমা ছিল। ভালো লাভ হতো। তখন একটা টিনের (প্লেনসিট) দাম ছিল মাত্র ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এক কৌটা রঙের দাম ছিল মাত্র ১০থেকে ১৫ টাকা। একটা টিন থেকে তিনটা বোর্ড বের হতো। ছোট গোল বোর্ড চারটা হতো। এই গোল বোর্ডগুলোর দাম ছিল ১৫ টাকা। সবমিলে ১৫০ টাকার মতো দাম পরতো।সারাদিন ছয়টা বোর্ড হতো। সেই সময় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা উপার্জন করা যেতো।

এছাড়াও তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কম্পিউটার ও ডিজিটাল মেশিনে লেখা-লেখি ও ছবি দ্রুত সময়ে বের করা যায়। এছাড়া অনেক আধুনিক মেশিনে ছাপানোর কাজও করা হয়। তাই হাতের কাজের কদর কমেছে। অফিস আদালত থেকে শুরু করে সব জায়গায় ডিজিটাল কাজের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। টুকটাক ছোট ছোট কিছু স্কুল, জমি ক্রয় বিক্রয়, টুলেট ব্যানারের কাজ আসে। তাতে যে কয়েক টাকা আসে রঙের দাম ওঠলেও পারিশ্রমিক ওঠে না। সবকিছুর দাম বেশি। নিত্যপণ্যের দাম হাতের লাগালের বাইরে চলে গেছে। রঙের দামও অনেক বেশি। তার পরেও কাজ করতে হয়। বয়স এখন পঞ্চাশ পার হয়েছে। অন্য কোনো পেশায়ও যেতে পারছি না। তাছাড়া সারাজীবন আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। সমাজে একটা সম্মান আছে। অন্য পেশায় যাওয়ার কথা ভাবলেও মানষিকভাবে মানতে পারি না। যতদিন বেঁচে আছি এই ভাবেই বাকি জীবন পার করে দিতে চাই।

বার্তাবাজার/এম আই