দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় মিয়ানমারের যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিমাঞ্চল থেকে ১১০ জনের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এই রোহিঙ্গাদের গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় একটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে জাতিগত নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন রোহিঙ্গারা। দেশটির কোনও সরকারই এই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়নি। এমনকি রাখাইন থেকে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে পাড়ি জমিয়ে বসতি গড়েছেন বলে দাবি করে মিয়ানমার।
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে রাখাইনের ওই নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলীয় সোম রাজ্যের থানবিউজায়াৎ শহরে দুটি ট্রাক থেকে ৫৯ জন পুরুষ এবং ৫৮ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্রটি বলেছে, রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের এই দলটি থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিল।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দলটি রাখাইন রাজ্যের সিত্তে এবং মংডু থেকে প্রথমে নৌকায় করে যাত্রা শুরু করে। পরে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাদের সোম রাজ্যের থানবিউজায়াৎ শহরে নিয়ে যান। সেখান থেকে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল এই রোহিঙ্গাদের।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সাথে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) তীব্র লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অংশও কেঁপে উঠেছে। চলমান সংঘাতে রাখাইনের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই চলায় জান্তা বাহিনী রাখাইনের সব মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি নদীবেষ্টিত এই রাজ্যে পানিপথে ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রাণঘাতী অভিযান শুরু করে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন, নারী-তরুণী-কিশোরীদের ধর্ষণ, হত্যা করে সৈন্যরা। সামরিক বাহিনীর সহিংসতা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সেই সময় প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
বর্তমানে কক্সবাজারে বাঁশ ও প্লাস্টিকের তৈরি শরণার্থী শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মিয়ানমারের জান্তা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
শরণার্থী শিবিরের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং মিয়ানমারে ফেরা কিংবা পুনর্বাসিত হওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসায় তাদের অনেকে নতুন জীবনের সন্ধানে নৌকায় চেপে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি গণহত্যা মামলার বিচার চলছে। জাতিসংঘ রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানকে জাতিগত নিধনের লক্ষ্যে পরিচালিত বলে অভিহিত করেছে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় গত বছর অন্তত ৫৬৯ জন রোহিঙ্গা সাগরে নিহত অথবা নিখোঁজ হয়েছেন। সাগরে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি অথবা নিখোঁজের এই সংখ্যা ২০১৪ সালের পর প্রায় গত দশকের মধ্যে এক বছরে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বার্তা বাজার/জে আই