মাদারীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যানের নিজ চিন্তার ফসল সাঁকো সেতু। অল্পদিনেই সুনাম কুড়িয়েছে সাকো সেতুগুলো। কেউ সেতুগুলোকে বলে টিআর সেতু, কেউ বলে সাঁকো সেতু। প্রতি বছর বাশ-কাঠের সাঁকো নির্মানের জন্য বরাদ্দের আবেদন নতুন নয়। সেই নিয়ম ভেঙে দিয়ে ২ লাখ টাকায় সেতু উপহার দেওয়া হয়েছে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লোকদের। ত্রিশটির অধিক সাঁকো সেতু নির্মাণ করে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছেন সদর উপজেলা চেয়াম্যান ওবাইদুর রহমান কালু খান। সুযোগ পেলে কোথাও বাঁশের সাকো রাখবেন না বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যানের কাছে বাঁশের সাঁকো বা কাঠের পুল নির্মাণের জন্য টিআর বরাদ্দ চেয়ে অনেকে আবেদন করেন। এই পদ্ধতিতে বরাদ্দ দিলে কোনদিনই মানুষের দূর্ভোগ কমবে না। এছাড়া এই টাকার সঠিক ব্যবহারও অনেক ক্ষেত্রে হয় না। তাই চেয়ারম্যানের নিজস্ব চিন্তার ফসল সাঁকো সেতু। অল্পদিনেই সুনাম কুড়িয়েছে সেতুগুলো। কেউ বলে টিআর সেতু, কেউ বলে সাঁকো সেতু। প্রতি বছর বাঁশ-কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য বরাদ্দের আবেদন নতুন নয়। সেই নিয়ম ভেঙে দিয়ে ২ লাখ টাকায় সেতুর উপহার দেয়া হয়েছে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লোকদের। ত্রিশটির অধিক সাঁকো সেতু নির্মাণ করে রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছে এই সেতু।

বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের যাতায়াতের জন্য সাঁকো বা কাঠের পুলের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদনের নিয়মটি যুগযুগ ধরে চলে আসছে। বর্ষার মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন খাত থেকে এসব কাজের জন্য দিতে হয় বরাদ্দ। সেই বরাদ্দ কিছুটা কাজে আসলেও অনেক ক্ষেত্রে নামমাত্র কাজ হয়। কোথাও আবার হয়ও না। এসব বরাদ্দের আবেদন দেখে মাদারীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কালু খান সরকারি টাকা গুলোর সঠিক ব্যবহার করতে ও জন দুর্ভোগ কমাতে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে পরীক্ষা মূলক একটি সেতু নির্মান করেন যার খরচ হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

প্রথমে প্রকৌশলীরা এ কাজে টাকা ব্যয় করতে রাজি হননি। চেয়ারম্যান আত্মবিশ্বাসের সাথে তাদের বলেন ব্রীজ ভেঙে পড়লে তার নিজ পকেট থেকে সমস্ত খরচ বহন করবেন। সেতুটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে ও তার উপর দিয়ে মোটামুটি ভারী যানবাহন চলাচল করতে শুরু করে।

ঘটমাঝি ইউনিয়নের গগনপুরে প্রথমে এই সাঁকো সেতু নির্মাণ করা হয়। এরপর দুধখালী, কুনিয়া, ধুরাইল, পাঁচখোলা ইউনিয়নে বিভিন্ন জায়গায় ৩৩ টি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্রীজগুলো যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০২০-২১,২১-২২ ও ২২-২৩ অর্থ বছরে টিআর ও বিভিন্ন উন্নয়ন খাত থেকে ব্রীজগুলো নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে স্বল্প ব্যয়ের এ ব্রিজগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশাপাশি সুনাম কুড়িয়েছেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান কালু খান। সাধারণ জনগণের কাছে বেড়েছে গ্রহনযোগ্যতাও। অনেক এলাকা থেকে এখন এই সাকো সেতুর জন্য মানুষ আবেদন করেন যাতায়াতের জন্য। সারা দেশে এ পদ্ধতিকে বেছে নিবে বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে।

এ বিষয়ে কুনিয়া ইউনিয়নের মনিরুজ্জামান নান্নু বেপারী বলেন, একটি ব্রীজের অভাবে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছোট হলেও যে ব্রীজটি করে দেয়া হয়েছে তাতে আমরা খুশি। এখন আর আসা যাওয়ায়, মালামাল নিয়ে আসতে বা যেতে কোন কষ্ট হয় না।

দুধখালী ইউনিয়নের ছরোয়ার খা বলেন, বছর বছর বাঁশের সাঁকো দিতাম এখন স্থায়ী সমাধান হয়েছে ব্রীজটি পেয়ে। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া আসা নিয়েও চিন্তা করতে হয় না। উপজেলার চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ। তাকে আবারও সমর্থন দিব, ভোট দিব।

ধুরাইল এলাকার দানিয়েল হোসেন বলেন, এত অল্প টাকায় এত সুন্দর ব্রীজ কল্পনা করা যায় না। ব্যতিক্রম চিন্তার ফলে অনেক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখছে। কোথাও হয়তো আর সাকো খুজে পাওয়া যাবে না। এমন সাকো সেতু হয়ে যাবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান কালু খান বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে তার কাছে বাশের-কাঠের সেতু নির্মানের জন্য অনেক আবেদন আসতে থাকে টিআর এর জন্য। তিনি চিন্তা করেন প্রতিবছর এভাবে টাকা না দিয়ে যদি স্থায়ী সমাধান কিছু করা যায় তাহলে ভাল হয়। তাই তিনি পরীক্ষা মূলক একটি ব্রীজ নির্মাণ করেন। যার খরচ হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এর পরে লোকজনের আবেদনে ত্রিশটির অধিক সেত নির্মাণ করেন তিনি। ২ লাখ টাকার সেতু এখন বেশ জনপ্রিয়। অনেকে এখন বড় সেতু চায় না এই সাকো সেতু চায়। যাতে সেতু পেতে দেরি না হয়। সুযোগ পেলে কোথাও বাঁশের সাঁকো রাখবেন না বলেও জানান তিনি।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান বলেন, সাঁকো সেতু মাদারীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনেক এগিয়ে নিয়েছে। যে সব এলাকায় সাঁকো আছে সেখানেও এই সেতু নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলেন তিনি। এ পদ্ধতিটিকে তিনি সাধুবাদ জানান।

বার্তাবাজার/এম আই