শীতের সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় রস সংগ্রহের কাজ চলছে । শীত এলেই গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় এই খেজুর গাছকে কেন্দ্র করেই। অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ এই তিন মাস খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ মানুষকে মুগ্ধ করে। তাছাড়া খেজুরের রসের তৈরি পিঠা-পুলি আর পায়েস যেন শীতকে করে তোলে আরো পরিপূর্ণ।

খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছীরা ভোর থেকে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন। শুরু হয়েছে এলাকায় এখন রস সংগ্রহের পালা। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসব মুখর পরিবেশ। খেজুর রস সংগ্রহ করে আমন ধানের চালের পিঠা, পুলি ও পায়েশ তৈরির ধুম পড়ে গেছে গ্রামে গ্রামে। তাছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া ও মুড়ি খাওয়ার জন্য কৃষক পরিবার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে শীতের মৌসুমে এ রস দিয়ে হরেক রকম খাবার অতি প্রিয় হয়ে ওঠেছে।

সপ্তাহের চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। এর ফলে গাছের রস বেশি পড়ে। রস থেকে তৈরি গুড় বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা রোজগার করতে পারেন। এমনকি কেউ কেউ দুই থেকে তিন লাখ টাকা গুড় বিক্রি করে আয় করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল গ্রামের আব্দুল আলিম বিগত ২০ বছর ধরে রস সংগ্রহ করছেন। ৫০টির অধিক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন।

খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। তাই এ অঞ্চলজুড়ে খেজুরের রসের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।

বগুড়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলার গাছি প্রতিদিন বিকালে ছোট-বড় কলসি (মাটির পাত্র) গাছে বাঁধা হয়, আর সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালেই এই রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করেন। গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এইভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করতে হয়। রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে হয় অথবা আগুনে ছেকে নিতে হয়।

লুৎফর রহমান নামের এক গাছী জানান, ৩০ টি গাছে রস সংগ্রহ করেন। সেই কাঁচা রস সকালবেলা বিভিন্ন বাজারে ৩০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেন। বাকি রস জাল করে গুড় তৈরি করে বাজারজাত করেন।

খেজুরের রস সংগ্রহ করে, সেই রস থেকে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পণ্য তৈরি করেন গাছীরা। এগুলো গুড় বা খাদ্য নিকটস্থ বাজারে বিক্রি করে নিজেদের সংসার চলছে স্বাচ্ছন্দে।

বার্তাবাজার/এম আই