দিন যতই ঘনিয়ে আসছে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধ। এতোদিন দলের সিনিয়র নেতা কর্মীদের সমর্থন না পেলেও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের পেছনে ফেলে নৌকা এগিয়ে ছিলো। মাঝপথে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকে প্রচারনায় নামার সাথে সাথেই পাল্টেগেছে আসনটির চিত্র। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করছেন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ। হেভীওয়েট এই দুই প্রার্থী একে অপরকে গায়েল করতে চলছে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকি। আধিপত্যের লড়াইয়ে পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়াতে পারে বলে ধারনা বিশ্লেষকদের।

কক্সবাজার-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি’র স্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার চৌধুরী। ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত এই আসনে এমপি ছিলেন আব্দুর রহমান বদি। পরে দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তার পরিবর্তে তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী নৌকার মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। সেই সুবাদে এই আসনে তাদের একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। শাহীন আক্তারের হয়ে সভা ও গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বদি। এই পর্যন্ত নৌকার পক্ষে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের প্রথম সারির কাউকে দেখা না গেলেও নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত কোন দলের প্রতিদ্বন্ধি না থাকায় এবারেও নিশ্চিত বিজয় মনে করে ছিলেন শাহীন-বদি দম্পতি।

কিন্তু দ্বীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে গত ২১ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল বশর ঈগল প্রতিক নিয়ে প্রচারণায় নামার সাথে সাথে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অন্যন্য অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা ঈগলের পক্ষে মাঠে নামার পরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। ঈগলের গনসংযোগ ও সভা গুলোতে মানুষের উপস্থিতি নৌকার বিপরীতে হাওয়া বইছে সেটাই ইঙ্গিত করছে।

এদিকে নৌকা মার্কার সমর্থনে নির্বাচনী সমাবেশে সাবেক এমপি বদি স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশরকে জামায়াত, বিএনপির দালাল ও আওয়ামীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথাবার্তা বলে বিষোদগার করার ভিডিও তার কর্মী সমর্থকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছে। তার পাল্টা জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর সহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ নেতারা বিগত ১৫ বছর ধরে দলীয় নেতা কর্মীদের অবহেলা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে তুলাধুনা করছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর ‘বার্তা বাজার’কে বলেন- ১৫ বছর ধরে নিজের ও স্ত্রীর ক্ষমতার অপপ্র‍য়োগ করে উখিয়া-টেকনাফের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। দলীয় নেতা কর্মীদের সুযোগ সুবিধা দেয়নি। মাদক কারবারী ও বন্দর থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে লোক দেখানো ৫শ-১হাজার টাকা দিয়ে মানুষকে ভিক্ষুক বানিয়ে রেখেছে। যুবকদের জন্য কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। উখিয়া-টেকনাফ বাসীকে তার অপকর্ম থেকে মুক্তি দিতে আমি জনগনের প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হয়েছি। জনগণ ব্যালেটের মাধ্যমে তার জবাব দেবেন।

এছাড়াও বদি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। আবার জনসবায় কাউকে জনপ্রতিনিধি করে দেয়ার ওপেন ঘোষনাও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তারকে ফোনে পাওয়া না গেলেও তার পক্ষ হয়ে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি বলেন- নির্বাচনী বিধিমালা মেনে নির্বাচনের প্রচারনা ও গনসংযোগ চলছে। এখানে হুমকি ধমকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আওয়ামীলীগ করতে গেলে যে কমিটিতে নাম থাকতে হবে তা বাধ্যতামূলক নয়। শাহীন বদি এই আসনে আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন বলেই তাকে বারবার মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। জামায়াত বিএনপির সাথে আতাত করে নৌকাকে পরাজিত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। জনগন আমাদের সাথে আছে, সুতরাং শেষ হাসিটা আমরাই হাসবো।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে- এই আসনের ভোটারদের মূলত এলাকার উন্নয়ন ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন কার দ্বারা সম্ভব এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। তাদের দাবী বিগত ১৫ বছর এই অঞ্চলের মানুষ মাদকের দুর্নাম মাথায় নিয়ে ঘুরছে। যে এই অঞ্চলে মাদকের দূর্নাম গুছাতে পারবে মূলত তাকেই ভোটাধিকার প্র‍য়োগ করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি’র বেশ ক’জন সিনিয়র নেতারা জানান- বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসেনি তাই তাদের কোন বক্তব্য নেই।

তবে, বিএনপি জামায়াত সমর্থিত কর্মীদের মতে, মানুষের মাঝে ভোটাধিকার প্র‍য়োগের আখাংকা প্রবল। তারা ভোটাধিকার প্র‍য়োগ করতে পারলে নৌকার বাহিরেই তাদের ভোটাধিকার প্র‍য়োগ করবেন।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রার্থী ৭ জন হলেও তাদের মধ্যে হেভীওয়েট দুই জনই আওয়ামী লীগের। উভয় পক্ষই শক্তিধর। প্রকাশ্যে যেভাবে হুমকি-ধমকি চলছে এভাবে হলে সাধারন ভোটারটা ভোটাধিকার প্র‍য়োগে আগ্রহ হারাবে। ফলে অংশগ্রহন মূলক নির্বাচনের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। তাই নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও ভোটারদের অংশগ্রহনমূলক করতে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।

প্রসঙ্গত, এই আসনে আরো যারা প্রার্থী হয়েছেন- জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী- নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রার্থী ফরিদ আলম (আম), তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্য জোট প্রার্থী মোহাম্মদ ওসমান গণি (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাঈল (ডাব)।

বার্তাবাজার/এম আই