সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার রাস্তার ইট তুলে নিয়ে বিক্রির ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তাকে। ২৪ ঘন্টার ভিতরে ওই ইট বুঝ করে দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ৭দিনের ভিতরে রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে ইট কম পড়লে সেটা চেয়ারম্যানের নিজস্ব অর্থায়নে পূরণ করতে হবে। অন্যথায় নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ‘সাতক্ষীরায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার রাস্তার ইট বিক্রির অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক শিরোনামে অভিযুক্ত মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওইসংবাদে বলা হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে অর্ধশতাধিক জনবল নিয়ে সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের শালিখেডাঙা-কুলপোতা আঞ্চলিক সড়কে এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত ওই সড়কের ইট তুলে নিয়ে বিক্রি করতে থাকেন তিনি। খবর পেয়ে সাতক্ষীরার স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার নিজস্ব প্রতিনিধি ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকিরের ঘটনাস্থলে যেয়ে স্থির ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন চেয়ারম্যানের লোকজন। এসময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে আব্দুর রহিম বাবু নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকিরের ফোন কেড়ে নিয়ে স্থির ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন।

প্রকাশিত হয় সংবাদের পর সাতক্ষীরা সাংবাদিক কেন্দ্র, দেবহাটা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়। এসময় এঘটনার সুষ্ঠু বিচারেরও দাবি জানান তারা। এরপর থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়সহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। এবং তদন্তে এঘটনার সত্যতা মেলে। যার ফলস্বরূপ অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন বলে জানা গেছে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সদর উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। তিনি ইট ফিরিয়ে দেয়াসহ নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তাটি পুনরায় ঠিক করবেন বলে জানিয়েছেন। এজন্য তাকে একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আর যেহেতু বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নলেজে রয়েছে। এজন্য তিনি যদি নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে রাস্তাটি ঠিক না করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াকুব আলী জানান, বিষয়টা সম্পর্কে প্রথমে কোনকিছু জানতেন না তারা। কেন বা কিসের জন্য রাস্তার ইট তোলা হচ্ছে সেব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদেরকে অবগতও করেননি। পরে সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকিরের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা অবগত হয়। আমরা জানতে পারি, পেশাগত কাজে গেলে ওই সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে এঘটনার প্রমাণস্বরূপ ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলা হয়৷ যেটা নিয়ে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে প্রকাশিত ওইসংবাদের সূত্র ধরে আমরা কয়েক দফায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি৷ এবং নিয়মবহির্ভূত ভাবে রাস্তার ইট তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা মেলে। বিষয়টি আমরা আমাদের জায়গা থেকে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইয়ারুল হক বলেন, বিষয়টি আমাদের অগোচরে ঘটেছে। পরে সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর এঘটনায় আমরা কয়েক দফায় তদন্ত করি। এবং তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলে। আর এঘটনার পরে ওই ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমরা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে তাকে স্পষ্ট করেছি৷ আর যেহেতু বিষয়টি অনেকদূর গড়িয়েছে। এখন সবকিছু উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে।

এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভুইয়া চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে সাংবাদিক নাজমুল শাহাদাৎ জাকির বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর থেকে উপজেলা প্রশাসন আমার সাথে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেছে। এবং উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে পুরো ঘটনাটি আমি অবগত করেছি। তারা আমার সাথে একমত পোষণ করেছেন যে নিয়মবহির্ভূত ভাবে চেয়ারম্যান এই ইট তু্লে নিয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন এঘটনায় তারা তাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

বার্তা বাজার/জে আই