মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় পরিবেশ ও শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পাঁচ বছর ধরে চলছে অবৈধ ফিউচার ফাইভ নামের একটি গার্মেন্টস এক্সোসরিস কারখানা। এতে হুমকির মুখে পরিবেশ ও মানবজীবন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর খালের পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ফিউচার ফাইভ এক্সোসরিস নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন যাবৎ আইনের কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের গুটি কয়েক জনকে বশ করে চলছে এই কারখানাটি। এই কারখানায় পুরোনো টায়ার ও কাঠ সংগ্রহ করে তা জ্বালানি তেল দিয়ে পুড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান তৈরি করছে। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকির স্বরুপ।

এই কারখানা হতে নির্গত- ধোঁয়া, ধোঁয়াশা, বর্জ্য, এগজোস্ট গ্যাস, গ্রিন হাউস গ্যাস ইত্যাদি দ্বারা বায়ু দূষিত হচ্ছে। মানুষের শ্বাস গ্রহণের সময় দূষিত বায়ু দেহের মধ্যে প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে যকৃত, অগ্নাশয় ও বৃক্কে ক্রমান্বয়ে জমা হয়। এর ফলে বমি, মাথাব্যথা, বুকব্যথা, নাক-মুখ জ্বালা, এজমা, এলার্জি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, মানসিক অস্থিরতা, ক্যান্সার ইত্যাদি জটিল রোগেরও সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যদিকে কারখানার ক্যামিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য পানি গোলড়া প্রবাহিত খালে ফেলে ধ্বংস করছে জলজপ্রাণি ও ক্ষতি করছে কৃষিজমির উর্বর শক্তি। যার কারনে পরিবেশ ও মানুষ ব্যপক হুকির মুখে। কারখানার দূষিত পানি ব্যাকটেরিয়া, ক্ষুদে জীব, কেঁচো, সাপ, ব্যাঙ, বিভিন্ন উপকারী প্রাণী, মাছ, জলজ উদ্ভিদ ইত্যাদির মৃত্যু ঘটছে। আর এই দূষিত পানির কারনে এলাকার লোকজন খালে আর দৈনিন্দন কাজ করতে পারছে না। পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমনকল্পে প্রণীত আইন থাকলেও তা মানছে না প্রতিষ্ঠানটি। অজানা কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন৷

অপরদিকে যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম আইনে উল্লেখ আছে, শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে সকল আইনের বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করেই চলছে কারখানাটি। এ যেন দেখার কেউ নাই।

এ বিষয়ে কারখানাটির একাধিক শ্রমিক জানান, আমরা এই কারখানায় ৫ বছর যাবৎ চাকুরী করে আমাদের বেতন হয়েছে মাত্র ৭ হাজার টাকা। আমাদের নিয়োগ পত্র, পরিচয়পত্র,ডাক্তারি সেবাসহ যে সকল সুবিধা দেওয়ার কথা তার কোন কিছুই আমরা পাই না।

স্থানীয়রা জানান, এই ফ্যাক্টারীর কর্মচারীরা রাতের বেলায় কাঠ ও টায়ার পুড়িয়ে সুতা রং করার পানি গরম করে। রাতে কাঠ ও টায়ার পুরানো দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস আমাদের ঘরে প্রবেশ করলে ঘুমানো যায় না। কারখানার যে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আমাদের খালে ফেলার কারনে আমরা কোন ধরনের কাজ করতে পারি না। খালের দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারনে বাতাসও দর্গন্ধ হয়। আমাদের ঘরবাড়িতে থাকা খুবই কষ্টকর। এ কারনে আমাদের মাঝে-মধ্যে অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে।

এ বিষয়ে কারখানার মালিক আবুল খায়ের বলেন, আমি কল কারখানা ও পরিবেশের অফিসারদের সাথে যোগাযোগ রাখি। আমার বক্তব্য দেওয়ার কিছুই নাই, আপনার যা মনে চায় তাই লিখেন আমার কোন সমস্যা নাই।

জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: ইউসুফ আলী বলেন, ওই কারখানার ফাইল দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলার সিভিল সার্জন মো: মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, খালের পানিতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ফেললে এবং কাঠ ও টায়ার পুড়ালে পরিবেশ ও মানব জীবন হুমকির মুখে পড়ে। যে খালে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ফেলবে সে খালের মাছ খেলে বন্ধ্যাত্ব, জন্মগত ত্রুটি, স্নায়ু-বৈকল্য, ক্লোন রেক্টাল, কিডনি সমস্যা, প্রষ্টেট, যকৃৎ, ফুসফুস, পাকস্থলী ক্যান্সার ও লিউকোমিয়া রোগ হয় এবং লিভার ও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করে। বায়ু দূষণের ফলে হাঁপানি, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্যানসারসহ যাবতীয় রোগ হয়।

বার্তা বাজার/জে আই