ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে একসময় ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি কর্যক্রম ছিল চাঙ্গা। এখন এই স্থলবন্দরটি দিয়ে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দরটি ১৯৯৪ সালে চালু হয় এই স্থল বন্দরটি ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ ৭টি রাজ্যে প্রবেশের অন্যতম দ্বার হিসেবে পরিচিত। বন্দরটি চালু হওয়ার পর থেকেই রপ্তানি মুখী একটি স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে।

এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন হিমায়িত মাছ, পাথর, সিমেন্ট, ইট, রড, শুটকী, প্লাস্টিক সামগ্রী ও তুলাসহ প্রায় ৪২টি বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়। এসব পণ্য রফতানি করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতেন বাংলাদেশ।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে এই স্থল বন্দরের গুরুত্ব ও পণ্য পরিবহনের পরিমান প্রচুর বেড়ে গেছিল।

একটি সময় এসে আস্তে আস্তে এই বন্দর দিয়ে রফতানি কার্যক্রম একবারে কমে আসে। তার মূল কারণ হল এই ৭টি অঙ্গ রাজ্যের সাথে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি হওয়ার কারনে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশী পন্য রপ্তানি অনেকটা কমে যায়,হিমায়িত মাছ সহ হাতে গুনা কয়েকটি পন্য ছাড়া আর কিছুই রপ্তানি হয়না এই বন্দর দিয়ে।

কিম্তু আখাউড়া স্থলবন্দরকে ঘিরে সরকার কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে, ইতিমধ্যে ভারত-বাংলাদেশর যৌথ উদ্যোগে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ফোর লেন সড়কে উন্নতিকরন কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি রেলপথ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গত ১ নভেম্বর উদ্বোধন হয়েছে । সেই সাথে এডিবি ( এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) স্থলবন্দর এলাকায় ৮০ কোটি টাকা ব্যায়ে বিভিন্ন অবকাঠামো কাজ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি ডরমিটরি ভবন, একটি কোল্ড স্টোরেজ, ২টি ওয়েড ব্রিজ স্কেল, একটি ওয়্যার হাউজ, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন অবকাঠামো কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এত এত উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়ে ব্যবসায়ীরা এই বন্দরে আগের মত ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চাঙ্গা করার জন্য রপ্তানি পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে৷ এই বন্দর দিয়ে মাঝে কিছুদিন গম ও আদা আমদানি করা হলেও এই আমদানি গুলোও একসময় বন্ধ হয়ে পরে। ব্যবসায়ীরা মনে করছে নিষিদ্ধ পন্য ব্যতীত সব ধরনের পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারলে এই বন্দর দেশের অন্যান্য বড়বড় স্থল বন্দর সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। সেই সাথে এই বন্দর থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে। স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হয়ে উঠবে এই স্থলবন্দর।

এ বিষয়ে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীক দীপা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকার মো: নাছির উদ্দীন বলেন,আমাদের ভারত থেকে পন্য আমদানি করতে যে একটি শর্ত আরোপ রয়েছে সেইটি তুলে দিলে আমরা আশা করি এই বন্দরে আগের মত কর্মচঞ্চলতা ফিরে আসবে। আমাদের এসআরও টা বর্ধিত করলে নিষিদ্ধ পন্য ব্যতীত বাকি সব পন্য আমদানি করতে পারলে সাশ্রয় মূল্যে আমরা যে কোন জিনিস আমদানি করতে পারব। এসব পন্য আমদানি করতে পারলে বাংলাদেশ বাজারে যেমন সাধারণ মানুষ উপকার ভোগ করবে সেই সাথে সরকারও রাজস্ব পাবে। যেহেতু ভারতের ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ তৈরি হয়েছে সেই সুযোগটি আমরা কাজে লাগিয়ে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানিমুখর হয়ে উঠবে আমাদের এই স্থলবন্দর।

এ বিষয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানি কারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন,আমদের এই স্থল বন্দরকে ঘিরে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে ও হবে। ইতিমধ্যে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ফোর লাইনের কাজ চলমান রয়েছে। সেই সাথে রেললাইনও চালু হয়ে গেছে। আমরা ব্যবসায়ীকরা আশা করছি বন্দরের যে অচল অবস্থা সেইটি দ্রুত কেটে উঠবে। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানির পাশাপাশি নিষিদ্ধ পন্য ব্যতীত সব ধরনের পন্য আমরা আমদানি করতে পারলে এই বন্দর পূর্বের ন্যয় আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। সেই সাথে আমরা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আমদানি-রপ্তানি বাড়ানোর জন্য।

এ বিষয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের সুপারনটেনেন্ট সামাউল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি কারণে ভারতের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি অনেকটা কমে যায়। সেই সাথে বন্দরে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বন্দরের রাজস্ব ও ব্যবসা-বানিজ্য বাড়নোর জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বন্দরকে ঘিরে বিভিন্ন অবকাঠামো কাজ সরকার হাতে নিয়েছে। বন্দরের ভিতরে উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য এডিবি থেকে ৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ চলমনা রয়েছে । আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ফোর লাইনের যে চলমান কাজ রয়েছে সেইটি শেষ হলে এই বন্দর দিয়ে আমাদানি রপ্তানি বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। সেই সাথে সরকার এই বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

বার্তাবাজার/এম আই