দেশের অন্যতম বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার রাত ১১টার দিকে বণিক সমিতির পুরাতন অফিস গলিতে এই আগুন লাগে। খবর পেয়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সোয়া ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, আগুনে কমপক্ষে ৮০টি দেশীয় কাপড়ের পাইকারি দোকান পুড়ে গেছে। বাজারের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের লাগতে পারে।

সরেজমিন বাজারের ব্যবসায়ী, বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি শুক্র থেকে রোববার পর্যন্ত পাইকারি এই হাটে চলে বেচাকেনা। হাটের শেষদিন রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বণিক সমিতির পুরাতন অফিসের গলিতে ধোঁয়া দেখতে পান স্থানীয়রা। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাজারের গলির ৭০ থেকে ৮০টি দোকানে। ভয়াবহ আগুনের ধোঁয়া ও লেলিহান শিখায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকান মালিকেরা লোকজন নিয়ে মালামাল সরানোর চেষ্টা ও আগুন নেভানোর কাজে নামেন। অনেক ব্যবসায়ী আগুনের ভয়াবহতা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে নরসিংদী, মাধবদী ও পলাশসহ আশপাশের ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। বাজারে গলিতে প্রবেশের মূখে সেতু ভাঙা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রিজার্ভ ট্যাংকের পানি ও পাশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম ও পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

বণিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আগুন দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। সেতু ভাঙা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বাজারের গলিতে ঢুকতে পারেনি। ৩ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে কমপক্ষে ৮০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তদন্তের পর ক্ষতিগ্রস্ত মোট দোকানের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, অগ্নিকান্ডে প্রায় ২৫০ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

ঢাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ব্রিজ ভাঙার কারণে আমাদের গাড়ি একটু দূরে রেখে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। পাশের খালের পানিতে পাম্প স্থাপন করে একে একে মোট ১০টি ইউনিটের ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখানে প্রায় সবগুলো টিনের ঘর হওয়ায় ভেতরে পানি ঢুকছিল না, এজন্য টিন ভেঙে পানি দিতে হয়েছে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। আগুন লাগার সময় একটি চক্র থাকে লুটপাটের চেষ্টা করে, এমনটা যাতে না হয় সেজন্য আমাদের ৭০ জনের মতো ডিবি পুলিশ সদস্যও দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা যানজট ও বাড়তি লোকজনের ভিড় এড়াতে দায়িত্ব পালন করেন।’

জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, এটি একটি বড় বাজার, ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রা শিকারীকে প্রধান করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বণিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের সদস্য করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম।

তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে সরকারিভাবে সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

বার্তাবাজার/এম আই