‘যদি তরিতে বাসনা থাকে ধররে মন সাধুর সঙ্গ, ভজ রে আনন্দের গৌরাঙ্গ’। কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক লালন শাহ’র মাজারের কাছকাছি এগোতেই ভেসে আসলো এমনি গানের বাণী। লালনের ১৩৩তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে সাধুর সঙ্গ। মনের বাসনা পূরণ ও লালন প্রেমের টানে জমজমাট হয়ে উঠছে সাঁইজির বারামখানা। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে আখড়াবাড়িতে আসতে শুরু করেছেন

সাধু-বাউল-ফকিররা। তাদের পদচারণায় সরব হয়ে ‍উঠেছে লালন প্রাঙ্গন। এসেছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। রেওয়াজ মতে চলছে গুরু-শিষ্যের সাধন-ভজন, ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন। কুষ্টিয়া লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, এবার ১৭, ১৮ ও ১৯ অক্টোবর তিন দিনের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিবারের মতোই আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজন থাকছে। ৩ দিনের আয়োজন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ উৎসবের উদ্বোধন করবেন। আগত সাধু বাউল ও পর্যটকদের নিরাপত্তা রক্ষায় এবার বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব।

 

কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন ছেউড়িয়ায় ফকির লালন সাঁইজির আখড়াবাড়ি। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক লালন সাঁইজির দেহত্যাগের পর থেকেই এভাবে অনুষ্ঠান চলে আসছে। সাধু-বাউলরা বৈঠকি ঢঙে বসে লালনের গানের বাণী নিয়ে আলোচনা করেন। শুধু আখড়াবাড়ির ভেতরে নয় বাইরেও কালীগঙ্গা নদীপাড়ের মাঠে আসন গেড়ে বসেছেন সাধু-ফকিররা। লালন একাডেমির আহবায়ক কমিটির সদস্য সেলিম হক বলেন, ফকির লালন জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় সাধু-ফকিরদের একত্রিত করে উৎসব করতেন। দিন রাত গান আর গুরু-শিষ্যের পরম্পরা চলতো। দুইশ’ বছরের সেই রেওয়াজ এখনো আছে। এর সঙ্গে ১৩৩ বছর ধরে তিরোধান দিবস পালন হচ্ছে। এটিও একই আদলে।

 

বছরে দুটি বড় উৎসবের মাধ্যমে লালনের অসাম্প্রদায়িক দর্শন বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। কুদ্দুস ফকির বলেন- লালনকে অনুসরণ করলে দেশে দেশে যুদ্ধ, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ কমে আসবে। হৃদয় সাধু বলেন, বাড়িতে ভালো লাগে না। এবার দুই সপ্তাহ আগে চলে এসেছি। সব সাধু-ফকিরদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যাবে। ভাবের আদান প্রদান হবে এটাই চাই। লালন মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আলী শাহ বলেন, এবার পয়লা কার্তিক সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হবে। এসময় সাধু-ফকিরদের খাবার দেয়া হবে। পরদিন দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। তিনি বলেন, এবার লোক সমাগম বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে।

 

ইএক্স/ও.আর/বার্তা বাজার