ভারতের গঙ্গা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নাম নিয়ে প্রবেশ করেছে। চলতি মৌসুমে উজানের ঢল আর আষাঢ়ের বর্ষণে নদীটিতে পানি বাড়ার সাথে সাথে রাক্ষসী হয়ে উঠছে। সারাবছর আগ্রাসী পদ্মায় ভাঙন আতঙ্ক থাকলেও সম্প্রতি ভাঙন তীব্র হয়েছে। ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে ভাঙনের ঝুঁকিতে একটি কলেজ ও মাদ্রাসা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি, সরকারি স্থাপনাসহ পদ্মা পাড়বাসীদের ঘরবাড়ি।

এদিকে ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পাঠানো একটি প্রকল্প এখনও ফাইল বন্দী রয়েছে।এতে করে পদ্মাতীরবর্তী মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা বলছেন,উজানের ঢল আর আষাঢ়ের বর্ষণে বাড়ছে পদ্মার পানি। ফলে দিনদিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে পদ্মা। দীর্ঘ একদশকে সরকারী হিসেবে ভিটামাটি হারিয়েছে প্রায় হাজার খানেক পদ্মা পাড়ের শ্রমজীবী মানুষ। তবে বেসরকারী সুত্র বলছে এর সংখ্যা অন্তত ৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সামান্য সরকারি সহায়তা আর ঘুরে দাঁড়ানো প্রবল ইচ্ছাতে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা নতুন করে স্বপ্ন দেখলেও, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছরে নদী ভাঙনের কবলে পানিতে মিশে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের মানুষের স্বপ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার সদর উপজেলার নারায়নপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা,দুর্লভপুর এবং উজিরপুরের কিছু অংশে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা ঈদগাহ থেকে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ছাব্বিশ রশিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ নদী ভাঙন।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে এবং কমলে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে উজানের ঢল আর বর্ষার কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পদ্মা পাড়ের হাজার হাজার মানুষের বসবাস হলেও কর্তপক্ষের উদাসীনতার কারনে প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এখানকার বাসিন্দাদের দাবি পদ্মা নদীতে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। লোক দেখানো অস্থায়ী জিও ব্যাগ-জিও টিউব ব্যবহার করে নদী ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা আর নদীতে টাকা ফেলা একই ব্যাপার।

ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ৪ দফা ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আইয়ুব বিশ্বাস পাড়ায় বাড়ি বানিয়েছিলেন।কিন্তু আবারও ভাঙ্গনের শঙ্কায় তিনি গত সপ্তাহে বাড়ি সরিয়েছেন।

শুধু তাই নয় সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলাল মাস্টার ও তার চার ভাই বাড়ি এবং আইয়ুব বিশ্বাস পাড়ার জালাল, দুলাল, নাজির, তোহর আলী সহ এসব এলাকার ৪০ জনের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

অপরদিকে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে সদর উপজেলার নারায়নপুর এলাকা। এখানকার আদর্শ মহা বিদ্যালয় ও নারায়নপুর দারুল হুদা আলিম মাদ্রাসা হুমকির মুখে থাকায় সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে পুরোদমে। কলেজ ভাঙ্গার পর কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে মাদ্রাসার ভবন ভাঙার কাজ।

নারায়নপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে কলেজটি ধুলাউড়ি এলাকা থেকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। দরপত্র আহবান করে কলেজটির ভবনসহ কিছু সরঞ্জামদি বিক্রির কার্যক্রম করা হয়েছে। বর্তমান স্থান থেকে নারায়নপুর আদর্শ মহা বিদ্যালয়টি প্রায় ৫০০ মিটার দুরের এলাকা বাগপাড়ায় কলেজটি অস্থায়ী ভাবে স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কর্মকর্তা স্বপন আলী বলেন, চলতি বছরের মধ্যে শিবগঞ্জের দক্ষিন পাঁকা থেকে ধুলাউড়ি ঘাটের কাছাকাছি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন হয়েছে। এতে কৃষকের আবাদি জমি, মানুষের ভিটামাটি সবই নদীতে বিলিন হয়েছে। পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙন আতঙ্কে দিনপার করছেন।

শিবগঞ্জের পাঁকা থেকে সদরের নারায়ণপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রনালয়ে এ প্রকল্পের কাগজপত্র দাখিল করেছেন। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি এখনও পাস (অনুমোদন) হয়নি।

নদী ভাঙন রোধে প্রস্তাবিত প্রকল্পের এ ৯ কোটি টাকা পদ্মা নদীর তীরে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ব্যবহারে খরচ করা হবে বলে জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।

বার্তা বাজার/জে আই