গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ঝিনাইদহের ৬ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সকাল ৮ টায় কার্যদিবস শুরু হয়। কিন্তু সরকারী সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেমাফিক হাসপাতালে আসেন শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুল আলম পারভেজ। আবার ডিউটি চলাকালীন সময়ে পার্শবর্তী একটি ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন তিনি। এতে চরম ক্ষুব্ধ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ রোগী ও তাদের স্বজনরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাঃ মাহবুবুল আলম পারভেজ শৈলকুপার উমেদপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন হিসেবে কর্মরত থাকলেও সেখানে কোনদিনও যাননি। অনেকটা গায়ের জোরে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন। গ্রামের মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য ইউনিয়নে যান না তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, ডাঃ মাহবুবুল আলম পারভেজ হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকে নিজের ইচ্ছেমত সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালে ডিউটি থাকলেও তিনি পার্শবর্তী একটি ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন। গুরুতর অনেক রোগী ফেলে রেখে তিনি ওখানে বসে থাকেন। এছাড়াও গত জানুয়ারী মাস থেকে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত ১৮১ দিনের মধ্যে তিনি ৯০ দিনই হাসপাতালে দেরিতে এসেছেন। হাসপাতালের ডিজিটাল হাজিরা রিপোর্টে দেখা যায় সকাল ৮ টায় অফিস শুরু হলেও তিনি আসেন সকাল ১০ টা বা তার পরে। নির্ধারিত সময়ের পরে এসে হাজিরা দিয়ে আবার চলে যান ক্লিনিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বায়িত্ব অবহেলার কারণে ডা: মাহবুবুল আলম পারভেজ’র শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। ২০২২ সালের ২৮ মার্চ মহামারী করোনার সময় সারাদেশে গণটিকা কার্যক্রমের দিন তার দ্বায়িত্ব ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নে থাকলেও তিনি সেখানে না গিয়ে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অপারেশন করেন। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এতে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। বদলি করে দিলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আবারো শৈলকুপায় এসেছেন তিনি।

অনিয়মের ব্যাপারে ডাঃ মাহবুবুল আলম পারভেজ বলেন, আমি তো ঝিনাইদহ থাকি। অনেক সময় গাড়িতে আসতে একটু দেরি হয়। আপনার বিরুদ্ধে অনিয়মের অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা তো পুরাতন কথা।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন বলেন, ডাঃ মাহবুবুল আলম পারভেজ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বাইরে প্র্যাকটিস করেন। তাকে কিছু বলতে গেলে তিনি কোন কথা শোনেন না। এ বিষয়ে আমি সিএস স্যারকে জানিয়েছি। তিনিই ব্যবস্থা নিবেন।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, ডাঃ মাহবুবুল আলম পারভেজ অনিয়ম করেছেন এমন অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্তাবাজার/এম আই