মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে যখন দেশের সকল স্কুল কলেজ বন্ধ ছিলো। তখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে খেলাধুলা, আড্ডা কিংবা হাতে থাকা স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতো। আবার, অনেক শিক্ষার্থীরাই নিজেদের সময় নষ্ট না করে পরিবারকে সাহায্য করতে কিছু একটা করে উপার্জন করে মা-বাবার কষ্ট কিছুটা হলেও লাগবের চেষ্টা করেছিলো। এমনই একজন হলেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার রাকিবুল হাসান হিমেল। করোনার সময়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পিতা কে কৃষি কাজে সহযোগিতা করেন। তখন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ শুরু করেন।

রাকিবুল হাসান হিমেল পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজের অনার্স ( মার্কেটিং) এর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। সে উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মোঃ খুরশিদ উদ্দিনের ছেলে।

দেখা যায়, রাকিবুল হাসান হিমেল ভোরে উঠে জমি থেকে কাঁচা মরিচ, বেগুন, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি তোলে গাড়ি বোঝাই করে তা বিক্রি করছে পাইকারি বাজারে। সবজির বাজার উঠানামা করে প্রতিনিয়তই। তাই সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয় উদ্যোক্তা হিমেল কে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হিমেল তার পিতার কৃষি কাজেই সময় দিয়েছেন। পরে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রায় ১০৫ শতাংশ জমিতে মরিচ, পাশের প্রায় ১০০ শতাংশ জমিতে বেগুন, ধুন্দলসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করছেন এই শিক্ষার্থী। এখান থেকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন পাইকারি বাজারে। প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার উপরে সবজি বিক্রি সম্ভাবনা রয়েছে তার।

অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে ‘সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নিয়ে কৃষিকাজ করছেন রাকিবুল হাসান হিমেল নামের এই অনার্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এতে একদিকে পরিবারের চাহিদা মিটছে অন্যদিকে উৎপন্ন সবজি বিক্রি করে মিলছে আর্থিক সচ্ছলতাও। মোবাইলের পিছনে অন্য দশ জন শিক্ষার্থীর মতো সময় না দিয়ে নিজেই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এখন সে স্বাবলম্বী।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান হিমেল বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় কলেজ বন্ধ হয়ে যায় । কিছু দিন অপেক্ষা করার পর যখন বুঝতে পারি কলেজ খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। তখন কোনো একটা উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করি। ঠিক তখন রাজনীতির পাশাপাশি পিতার কৃষি কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি নিজেই কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগীতায় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এই কাজে আমার মা-বাবা, বড় বোন সময় দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করছেন। রোজার এই সময়ে সবজি বাজার তুলনামূলক ভালো থাকায় এখান থেকে সাফল্য পেয়েছি অনেকটাই এবং এখন কাঁচা মরিচ থেকে আরো বড় সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি।

সিজনাল সবজিতে লাভ বেশি নিজের প্রায় দশ একর জমি আছে আমাদের এর মধ্যে থেকে এ-বছর ১০৫ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছি, যদিও ৯০℅ ফলন কম থাকায় বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেশি, তাই এ বছর কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজি চাষ করে খরচ বাদে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আয় হবে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, আমি পিতা মুজিবের আদর্শের সৈনিক, আমি পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী, পিতা মুজিবের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে যারা রাজপথে স্লোগান দেয় তাদের কে বলবো রাজপথে স্লোগানের মাধ্যমে পিতা মুজিবের আদর্শের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করা যাবে না, আমি আমার পিতা মুজিবের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য লেখাপড়া রাজনীতির পাশাপাশি কৃষিতে শ্রম দেই যাতে করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো উন্নত হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

হিমেলের বাবা খুরশিদ উদ্দিন বলেন, আগে নিজে কামলা লইয়া ক্ষ্যাত-খামার করছি। অনেক দিন ধইরা আমার শরীলডাও বেশি একটা ভালো না। অ্যারপর থাইকা পোলাডাই কামকাজে সাহায্য করতো। পরে উই একলাই পুরা ক্ষ্যাত করছে। প্রায় ৫ বিঘার বেশি জমিতে ধুন্দল, করলা, বেগুন, মরিচ,শসা বুনছে। ভালো দামে হেই গুলা আবার বেঁচছেও। এলাকার অন্য পোলাপানের মতো বাইরে ঘোরাফেরা না কইরা সংসার সামলাইছে হিমেল। এইডাই আমার জন্য অনেক।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূর -ই- আলম বলেন, ‘এটাতো খুব ইন্সপাইরিং একটা কাজ। একদিকে তার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা সে পূরণ করেছে। পাশাপাশি আর্থিকভাবে সে ও তার পরিবার স্বচ্ছল হয়েছে। আরো ১০ জন হিমেলের মতো উৎসাহিত হবে, সেই সাথে স্বাবলম্বীও হবে। শিক্ষিত ছেলেরা কৃষির সাথে সম্পৃক্ত হলে কৃষি আধুনিক হবে। আধুনিক কৃষি কাজ মূলত শিক্ষিত লোকজন কৃষির সাথে জড়িত হওয়া। তারা নতুন প্রযুক্তি ও জাত নিতে পারবে। নতুন প্রযুক্তি ও জাত কিন্তু মান্ধাতা আমলের কৃষকরা নিতে চায় না। মূলত তারা ঝুঁকি নিতে চায় না।এ ধরণের উদ্যোগ যে নিবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সকল ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

বার্তা বাজার/জে আই