ষাটোর্ধ্ব সোনা বানু নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে অসহায় দৃষ্টিতেচেয়ে আছেন সর্বনাশা নদীর দিকে। নদীর পারেই সোনা বানুর
নিজের একটিসহ ৩ ছেলের পাঁচটি ঘর ছিলো। হঠাৎ নদী ভাঙনে ৩ টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। টিউবওয়েলের অর্ধেকাংশ ফাটল দেখা দিয়েছে, নিচের মাটিও সরে গেছে, সে সময়ও ঝুকি নিয়ে ওযু করা অবস্থায় কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলতে থাকেন, ৫০ শতাংশ জাগা (জায়গা) আছিলো। বড় বড় ফাটা (ফাটল) আর ভাঙ্গা। বাড়ির মায়ায় ফাটা দেইহাও ডরে ডরে (ভয়ে) ঘরে আছিল্যাম। কিন্তু সব শ্যাষ।

সোনা বানুর মতো অর্ধ-শতাধিক মানুষের ঘর গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বংশাই নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব বাসিন্দার অবস্থান টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার হাট ফতেপুর গ্রামে। সোনা বানু আরও বলেন, বিশ-ত্রিশ বছর আগে এহেনে বাড়ি করছি। তহন নদী ম্যালা ফাকে আছিলো। মরার ম্যানসে মাটি তুইল্যা তুইল্যা, বালু তুইল্যা তুইল্যা তাদে এগনা করছে, জীবন- যাপন কিভাবে করছেন জানতে চাইলে বলেন, কন থিক্যা কি করি আল্লাই জানে, ম্যানসের বাড়ি বাড়ি দৌড় পাড়া হারি ন্যা। খুব কষ্টে আছি, এ সময় তিনি সরকারি সহযোগিতাও কামনা করেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বংশাই নদীর পশ্চিম পারে অবস্থিত ফতেপুর বাজার ও গ্রামটি এখন নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও মির্জাপুর- ফতেপুরের যোগাযোগ সড়কটিও নদী গ্রাস করেছে। বসতভিটা হারিয়ে অনেক পরিবার ভাঙন কবলিত এলাকা সংলগ্ন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। অপরদিকে ভাঙনের ঝুকিতে থাকা অনেকে আতঙ্কিত হয়ে বসবাস করছেন।

মুখমন্ডলে হাত দিয়ে ভাবনায় থাকা জগত মায়া পালকে (৫৫) দেখে কথা বলতেই তিনি বলেন, বড় ঘর, দুয়ার, আরও একটি ঘর ও দুয়ার,দোকান ও রাস্তার পরেই ছিলো নদী। কিন্তু এর কোনোটিই এখন আর নেই, সব ভেঙে নদীতে চলে গেছে, আমরা এখন সব ভিক্ষারি হয়েছি। আমাদের আর কিছুই নেই। আমরা এখন কাগজ টানিয়া এই খোলা আকাশের নিচেই থাকতেছি। এরকম আরও অনেকেই ঘর হারিয়ে অন্যের জায়গায় থাকছেন।

হাট ফতেপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম সিকদার বলেন, ভাঙন ঠেকাতে না পারলে পুরো গ্রামটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে। জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে, তবে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই, যাতে কেউ আর এ ধরণের দুর্যোগের শিকার না হয়।

ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া এই প্রতিবেদককে জানান, ফতেপুর বাজারের প্রায় ২০-২৫টি দোকান, বাজার সংলগ্ন ওই এলাকার ২০টির মতো বাড়ি এবারের ভাঙ্গনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে সবমিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকার মতো ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় এমপি খান আহমেদ শুভ দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানেরও আশ্বাস দিয়েছেন।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বার্তা বাজারের প্রতিবেদককে জানান, ইতিমধ্যে আমরা জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করছি। শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী সমাধানের লক্ষে কাজের প্রস্তাব পাঠানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, নদীভাঙ্গন ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন
বোর্ডের মাধ্যমে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে
ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্যও উর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

বার্তাবাজার/রাহা