নীলফামারীর ডিমলায় চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বকুল রায়ের বিরুদ্ধে ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলেও ভাতা না পাননি প্রশিক্ষণার্থী। এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মহিলা সংস্থা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ক্ষমতাশীল দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বকুল রায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিজের পছন্দের ও দলীয় লোকজনকে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে ভর্তি, ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ ও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সরকার প্রদত্ত ভাতা কেটে রাখাসহ নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি দেখানো হতো। জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় জাতীয় মহিলা সংস্থা। এর আওতায় নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ডিমলার বাবুরহাট সদরে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৮০ দিন মেয়াদি চারটি (বিউটিফিকেশন, ক্যাটারিং, ফ্যাশন ডিজাইন, ইন্টেরিয়র ডিজাইন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট) ও ৪০ দিন মেয়াদি একটি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও ই-কমার্স) বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। প্রতিটি বিষয়ে দুই ভাগে ৫০ জন করে নারী প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। পর্যায়ক্রমে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে যাতায়াত ভাতা ৮০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ১২ হাজার এবং ৪০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে ৬ হাজার টাকা ও সনদপত্র দেওয়ার কথা। প্রশিক্ষণ শেষে কিছু প্রশিক্ষণার্থীর ভাতা পরিশোধ করলেও গত বছরের জুলাই থেকে আট শতাধিক প্রশিক্ষণার্থীর ভাতা দেওয়া হয়নি।

প্রশিক্ষণ শেষে সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের জানানো হয়, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে ভাতা পৌঁছে দেওয়া হবে। সনদপত্র ও ভাতার টাকা পেতে তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে অগ্রিম স্বাক্ষর। পরে জানতে পারেন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তাঁদের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও জাতীয় মহিলা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বকুল রায় লাপাত্তা। তিনি অফিসে আসেন না। পরে জানতে পারেন জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে বকুল রায় প্রশিক্ষণ ভাতার প্রায় ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে উধাও হয়েছেন। বকুল রায়ের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কাতিহার মাধবপুর গ্রামে। আর জেলা মহিলা সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান রাবেয়া আলীম সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-২৩ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে বকুল রায়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি বর্তমানে দায়িত্বে থাকা‌ প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কর্মকর্তা জ্যোতি কৃষ্ণ রায়। তিনি বকুল রায়ের নিকটাত্মীয়। জানতে চাইলে জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, সাবেক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করে ভাতার ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বকুল রায় পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আর্থিক ক্ষমতা চেয়ারম্যান ও প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ করতেন। ওখানে আমাদের কোনো ক্ষমতা ছিল না।

এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জেলা মহিলা সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান রাবেয়া আলীমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ছেলে রাশেদ মায়ের স্বাক্ষর জাল করে প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত চলমান।

 

 

বার্তাবাজার/এসএইচ